বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু: প্রধানমন্ত্রীর সহনশীলতার আহবান, চরমোনাই পীরের হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিজয় দিবসের আলোচনা আনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য’ নির্মাণ প্রসঙ্গে সবাইকে সহনশীল থাকার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা ওঠানোর চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সকলকে আমি এটুকুই বলবো, যেকোন পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কে কি বললো না বললো তা শোনার থেকে কতটুকু আমরা দেশের জন্য করতে পারলাম সেটাই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তাহলেই আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। সঠিক কাজ করতে পারবো।’
গতকাল বুধবার বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ আহবান জানান।
দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দৃঢ় থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,‘এই দেশের মাটিতে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান অধিকার নিয়েই বসবাস করবে। মনে রাখতে হবে- সকলে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। যার যা ধর্ম তা পালনের স্বাধীনতা সকলেরই থাকবে। আমরা সেই চেতনায় বিশ্বাস করি এবং ইসলাম আমাদের সে শিক্ষাই দিয়ে থাকে।’
এর আগে মহান বিজয় দিবসে গতকাল সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক-সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,একটি অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। এবার বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হচ্ছে,এ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সমূলে উৎপাটন করা।
শায়খে চরমোনাই পীরের হুঁশিয়ারি:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন,মামলা আর জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যদি অন্যায় করে থাকি জেলে দেন আপত্তি নাই। কিন্তু অন্যায় না করেও জেলে ঢোকানো হলে দেশের জনগণ তা মানবে না।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশাল বিভাগীয় নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা ভাবছেন জেলের তকমা এবং কেসের তকমা দেখালেই ইঁদুরের মতো পালিয়ে যাব। কিন্তু আমরা ভয়ে পালাবো না।
সমাবেশ শেষে একটি র্যালি করার ঘোষণা থাকলেও প্রশাসনের অনুরোধে তা করা হয় নি।
তিন শীর্ষ আলেমের বিরুদ্ধে মামলা:
শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামীর নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলার দু'টি পৃথক আবেদনের শুনানির পর আদালত অভিযোগ তদন্ত করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন- পিবিআইকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলেমদের বৈঠক:
এ দিকে, গত সোমবার রাতে ভাস্কর্যবিরোধী শীর্ষ আলেমদের পাঁচটি প্রস্তাব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে তার বাসায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন,আমরা মনে করি একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কেউ যেন ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলা নষ্ট না করে সে বিষয়ে আলেমরা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আলেমরা বলেছেন,তারা পাঁচটি দাবি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চান।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৭
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।