হেফাজতের ইস্যুতে কোন প্রকৃত আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি: ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
(last modified Tue, 15 Jun 2021 11:38:20 GMT )
জুন ১৫, ২০২১ ১৭:৩৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান আজ জাতীয় সংসদে বলেছেন, হেফাজতের ইস্যুতে কোন প্রকৃত আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী আলেম নামধারী ক্ষমতালিপ্সু রাষ্ট্র ও সমাজ-বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িতদেরই কেবল আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। এর আগে বিলটির  ওপর  বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা সাম্প্রতিক সময় আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে এর কঠোর সমালোচনা করেন। তাদের মুক্তিও দাবি করা হয় সংসদে। বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে ধর্মীয় জ্ঞানী ব্যাক্তি যাদের আমরা আলেম বলি তারা সাংঘাতিক নিপীড়নের মধ্যে রয়েছেন। তারা রিমান্ড ও গ্রেপ্তারের সম্মুখীন। তাদের দয়া করে  মুক্তি দিন।  না হলে দেশে ভারসাম্য নষ্ট হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের শীর্ষ ৫৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে  দুদক নোটিশ দিয়েছে। আমি মনে করি,  আলেমদের আগে আমাদের সাড়ে ৩০০ এমপিদের বিরুদ্ধে দুদক নোটিশ দিলে তা সমাদৃত হতো। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব  মাওলানা গাজী আতাউর রহমান রেডিও তেহরানকে  বলেন, দেশে আলেম ওলামাদের হয়রানি করা হচ্ছে অন্যায় ভাবে। যে সব অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা আদলতে প্রমাণের আগেই জাতীয় সংসদের মত স্থানে দাঁড়িয়ে তাদের অপরাধী বলে  অভিহিত করা অন্যায় এবং অবমাননাকর।

দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদোক) কর্তৃক  আলেমদের  সম্পদের  তদন্তের  উদ্যোগে বিস্ময় প্রকাশ করে ইসলামি আন্দোলনের নেতা  বলেন, যারা রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত তাদের কিছুই করতে পারছেনা দুদক। উদ্দেশ্যমুলকভাবে আলেমদের হয়রানি করা এবং তাদেরকে জনসমক্ষে হেয় প্রামাণ করার জন্য তাদের পেছনে  দুদক লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকদিন আগে একজন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা আবু ত্বহার মুহাম্মদ আদনান-এর নিখোঁজ হবার ঘটনা প্রসঙ্গে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মত একজন ইসলামি বক্তা  গুম হবার ঘটনায় গোটা আলেম সমাজের মধ্যে  আতংক বিরাজ করছে।

ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ

দেশের একজন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা আবু ত্বহার মুহাম্মদ আদনান গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সঙ্গে গাড়িচালকসহ অপর দুই সঙ্গীর হদিসও মিলছে না। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি লিখেছেন আবু ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। গত ৮ জুন রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার সময় দুই সঙ্গী ও গাড়িচালকসহ আবু ত্বহা নিখোঁজ হন উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি বলেন, 'তাদের ব্যবহৃত গাড়ি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। গত চার দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। দারুস সালাম ও পল্লবী থানায় গিয়ে কোনো আইনি সাহায্য পাইনি।' চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারও সহযোগিতা না পেয়ে আপনার বরাবর শেষ আশ্রয় প্রার্থনা করছি।'

আবু ত্বহা কোনো অপরাধ করে থাকলে, তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হোক বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। বিষয়টি আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়ার ভেরিফায়েড টুইটার থেকে নিখোঁজ ত্ব-হা আদনানের সন্ধান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে ত্ব-হার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নিষ্কৃয়তায়’ ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। জনপ্রিয় এই বক্তার নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন তারা।

অনলাইন এক্টিভিস্ট কামরুল আহসান নোমানি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন,  "চারটা জ্বলজ্যান্ত মানুষ আচমকা নাই হয়ে গেল এটা নিয়ে কারো যেন কোন ভাবান্ত ই নেই!, ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের পরিবারের তো বিচার চাইবারও কোন জায়গা নেই। এই রাষ্ট্র আমরা গড়েছি। আমাদেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা অবলীলায় সয়ে যাচ্ছি সবকিছু। হ্যাঁ একজন আছেন যিনি সব দেখছেন। চূড়ান্ত ফয়সালার দিন প্রত্যেককেই জাররা জাররা হিসাব দিতে হবে। মজলুমের ফরিয়াদ পৌঁছে যাক সাত আসমান তক!"

এদিকে, হেফাজতে ইসলামের আর এক নেতাকে আজ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মহানগরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলামী গত ২৬ মার্চ ভারতের  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও রক্তাক্ত হাঙ্গামায় জড়িত হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনের আলোচিত নেতা মামুনুল হক সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধ শত নেতা-কর্মীকে। এখনও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ সংক্রান্ত নানাবিধ মামলায় বিএনপির দু’ শ নেতা -কর্মীর নামে  মামলা দায়ের হয়েছে  বলে  অভিযোগ করেছে বিএনপি।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/ বাবুল আখতার /১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ