জুলাই ০৬, ২০২১ ১৮:৩৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ একমাসের ব্যাবধানে ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী একদিনে মৃত্যু এবং সংক্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে সোমবার (৫ জুলাই) । এদিন সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ৯ হাজার ৯৬৪ শনাক্ত ও ১৬৪ জনের মৃত্যু ঘটে। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ৭ শনাক্ত ও প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭ জনের মৃত্যু হয়।

এ সময়ে সারা দেশে করোনারোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। একক বিভাগ হিসেবে বরিশালে এদিন রোগী শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এদিকে আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) করোনায় বিভিন্ন জেলায় আরও ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে করোনায় আক্রান্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর অব্যাহত গতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞ্যান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর হোসেন উদ্দিন গণমাধ্যমকে  বলছেন, প্রধানত ভারতীয় ডেলটা ভ্যারাইটির  দ্রুত বিস্তারের কারনে এবং  জনসচেতনতার অভাবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি  হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত  সুবিধা সম্প্রসারিত করা এবং ব্যাপক সংখ্যক নাগরিককে দ্রুত টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।

টিকা কর্মসুচী

এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলতি জুলাই মাসেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা আসছে । এছাড়া আগামী আগস্ট থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আসার কথা রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী

পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৪২ লাখ টিকা চায় বিজিএমইএ

সম্মুখসারির অর্থনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত দেশী-বিদেশী কর্মীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে করোনা টিকা বরাদ্দ চেয়েছে শিল্পসংশ্লিষ্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলেছে, কভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এ শিল্প খাতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এ শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন কারখানায় ও আন্তর্জাতিক মানের অনেক ক্রেতার বিদেশি প্রতিনিধি বৈধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রয়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন।

তাদের মধ্যে অনেকেই কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের এবং বিদেশিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাক কারখানায় কর্মরত ৪২ লাখ শ্রমিকের পাশাপাশি বায়িং হাউজ ও কারখানার বিদেশি প্রায় সাড়ে ৮০০ কর্মকর্তার তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। এখন টিকা আসছে, অর্থনীতির স্বার্থেই আমাদের শিল্পের সম্মুখসারির অর্থনৈতিক যোদ্ধাদের জন্য টিকা নিশ্চিতের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিকিৎসক বদলি

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা জোরদার করতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত প্রায় ১২শ  চিকিৎসককে বদলী করে  মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে।

এর ফলে দেশের প্রায় ৪৫টি জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

লকডাউন কাহিনী

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিন চলছে আজ মঙ্গলবার। আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ রাস্তায় বেশি মানুষের চলাচল দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় চেকপোস্টের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। তল্লাশি বা টহলের সংখ্যাও কমেছে।

গত ১ জুলাই সাত দিনব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে গতকাল সোমবার নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সময়সীমা আরও সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার।

লকডাউনের শুরু থেকেই বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রেপ্তার ও জরিমানা করছেন। এ ছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

এদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা রাখতে চান দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে কল্যাণ সমিতি বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে অল্প সময়ের জন্য হলেও দোকান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান করে বাধিত করবেন।

ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন

আসন্ন ঈদ- উল-আযহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশু পরিবহনে বিশেষ ‘ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন’ সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে  বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১৭, ১৮ ও ১৯শে জুলাই এই তিনদিন বিশেষ ট্রেনে ঢাকায় আসবে কোরবানির পশু। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে ঢাকার মধ্যে এই ট্রেন চলবে। দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে বেলা সাড়ে তিনটায় ট্রেনটি ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে পরের দিন সকাল ছয়টায়। একটি ট্রেনে ৪০০টি পর্যন্ত পশু পরিবহন করা যাবে।

গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু পরিবহনে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর ধরে রাজশাহী  অঞ্চল থেকে আম পরিবহনে  এবং খুলনা অঞ্চল থেকে সবজী পরিবহনের জন্যও বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

 

ট্যাগ