পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পুর্বাভাস
দেশের উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যা ও নদীভাঙন পরিস্থিতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়াতে পারে
বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বন্যা পুর্বাভাস অনুযায়ী দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে, যমুনা নদীর কাজীপুর, সারিয়াকান্দি ও মথুরা পয়েন্টে এবং তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসব নদ-নদী বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হয়ে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে বন্যার অবনতি ঘটতে পারে বিভিন্ন এলাকায়। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উজানের ঢল আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে ক্রমাগত বাড়ছে পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার পদ্মা, যমুনা, মেঘনাসহ সাতটি নদ-নদী ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ডুবে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা সংলগ্ন চর ও নিম্নাঞ্চল। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ৭২টি স্থানে পানি বৃদ্ধির দিকে। এদিকে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় থাকার প্রভাবে সপ্তাহ জুড়ে টানা পাঁচদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৭২টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৫টিতে হ্রাস, দু’টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। এরমধ্যে ৮টি নদ-নদীর ১০টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আত্রাই, করতোয়া, পুনর্ভবা, কুলিখ, ট্যাঙ্গন নদ-নদী এবং মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পুর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
মুহুরী নদীতে পানি বিপদসীমার ১২.৬০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার দুপুরের দিকে মুহুরী নদীতে পানি বিপদসীমার ১২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেলের দিকে নদীতে পানি বেশি ছিল। রাত ৮টার দিকে নদীর বেড়িবাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পরে রাতের মধ্যে পানি কিছুটা নেমে গেলেও এখনও বিপদসীমা কাটেনি। গতকাল নদীর পানি ১৩ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে তারা জানান। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আড়িয়াল খা নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে
মাদারীপুরের শিবচরে বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে শিবচরের আড়িয়াল খা নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আড়িয়াল খা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র স্রোতে কলাতলা-শিরুয়াইল অংশে পুনরায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিনদিন যাবৎ আড়িয়াল খা নদীর এই স্থানে তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গনকবলিত সাধারণ মানুষ।
টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি
উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীতে পানি বেড়েছে ৮ সেমি। এ ছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
জেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাদের বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন জায়গা থেকেই তারা ত্রাণ সহায়তা পায়নি। তারা দ্রুত খাদ্য সহায়তা দাবি করেন।
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
পাহাড়ী ঢল, উজান থেকে নেমে আসা পানি আর ভারি বৃষ্টিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৬টায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তলিয়ে গেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ রোপা আমনের ক্ষেত। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।#
পার্সটুডে// আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।