সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে মৃত ডলফিন, উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা
পটুয়াখালীর গঙ্গামতি সৈকতে আজ দু'টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। প্রথমটি আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে এবং দ্বিতীয়টি দুপুর একটার দিকে উদ্ধার করা হয়। দু’টিই শুশুক প্রজাতির ডলফিন।
এ নিয়ে চলতি বছর মোট ১৯টি মৃত ডলফিন সৈকতে পাওয়া গেছে। এ বছর আগস্ট মাসেই এখানে ৯টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। গত বছর কুয়াকাটাসংলগ্ন উপকূলে সাত থেকে আটটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছিল।
বরগুনা অঞ্চলে কর্মরত ওর্য়াল্ডফিশ বাংলাদেশ -এর গবেষক সাগরিকা স্মৃতি গণমাধ্যমকে জানান, সৈকতের গঙ্গামতি পয়েন্টে বুধবার সকালে উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির কলিজা, জিব্বাহ অন্ত্র সহ বেশ কিছু স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করে রেখে মৃত ডলফিনটি মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। দুপুরে যে ডলফিনটি পাওয়া গেছে, সেটা পচে যাওয়ার উপক্রম। তাই দ্রুত মাটি চাপা দিতে হয়েছে।
সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণীগুলোর মধ্যে ডলফিন অন্যতম। শান্ত প্রকৃতির এই নিরীহ প্রাণীটি কারও ক্ষতি করে না। এটি কোনোভাবে জালে আটকা পড়লে তিন ঘণ্টার বেশি সময় থাকলে মারা যেতে পারে। বয়সের কারণে হার্টে ব্লক হয়ে কিম্বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও মারা যেতে পারে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে যন্ত্রণা ভোগ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
গত কয়েক কয়েক বছর ধরেই সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসছে। এ সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ২০২০ সালে ৬টি মৃত ডলফিন, ১টি মৃত তিমি ভেসে এসেছিল। এ বছর এ সংখ্যা আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ।
এ প্রসঙ্গে, কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির দলনেতা রুমান ইমতিয়াজ রেডিও তেহরানকে জানান, এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে ডলফিন মারা যাওয়ার খবরে তারা উদ্বিগ্ন।
তিনি জানান, মৃত ডলফিনগুলির বেশীরভাগই নদী মোহনার বিচরণকারী শুশুক প্রজাতির ডলফিন। কিছু আছে গাঙ্গেয় ইরাবতী ডলফিন। এগুলির মুখে জাল পেঁচানো এবং শরীরে আঘাত দেখে ধারনা করা হচ্ছে জেলেদের জালে আটকা পরে এগুলি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বা জাল আটকানো মুখ দিয়ে খাবার খেতে না পেয়ে মারা পড়ছে।
রুমান ইমতিয়াজ জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তাদের সদস্যরা জেলেদের সচেতন করছেন। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রচার এমনকি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু কেবল মাত্র মৌখিক আশ্বাস ছাড়া কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
ডলফিন হত্যা বন্ধে জেলেদের সচেতন করা, সমুদ্রে উপকূলে মাটিঘেঁষে পাতা হাজারি বা নাঙলা বড়শি ব্যয়ভার বন্ধ করা এবং সাগরে ছেঁড়া জাল বা প্লাস্টিকপণ্য না ফেলার জন্য সর্বস্তরের জেলেদের বাধ্য করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেবার দাবী জানিয়েছে কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির দলনেতা ।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. সাজেদুল হক জানান, সৈকতে ভেসে আসা ডলফিনের মৃতদেহ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা প্রয়োজন। কুয়াকাটাসংলগ্ন ১০ কিলোমিটার এলাকায় যদি এক মাসে ৮ / ১০টি মৃত ডলফিন ভেসে আসে, তা হলে পুরো উপকূলীয় এলাকায় কত ডলফিন মারা যাচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। জরুরি ভিত্তিতে এর প্রতিকার করা না গেলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই মাসে কুয়াকাটা সৈকতে ৮টি মৃত ডলফিন ভেসে আসার ঘটনায় একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বন বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিলেন। সরেজমিন এই কমিটি গত বছর অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ডলফিন মারা যাওয়ার জন্য - জালে আটকা পড়ে মারা যাওয়া, ইঞ্জিন চালিত বোট বা ট্রলারের প্রপেলারের আঘাতে মারা যাওয়া, রাক্ষুসে সামুদ্রিক প্রাণীর আঘাতে মারা যাওয়া, এবং পানি দূষণ ও সামুদ্রিক দূষণে মারা যাওয়াকে কারণ চিহ্নিত করেছে।
এ ছাড়া ওই কমিটি একটি কুইক রেসপন্স কমিটি গঠনসহ ১২ দফা সুপারিশও করেছে। তবে সেসব সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ওদিকে, কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলসের প্রধান নির্বাহী রাশেদুর মজিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমাদের হাতে তথ্য রয়েছে যে সাম্প্রতিক সময়ে ১০ থেকে ১২টি ডলফিনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে জেলেরা। আটকা পড়ার পর জাল বাঁচাতে সেগুলোকে হত্যা করা হয়। এভাবে হত্যার শিকার ডলফিনগুলোই টেকনাফ, ইনানী ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।’’#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/আবুসাঈদ/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।