করোনাকালে বাল্যবিবাহ ও শিশু-নারী নির্যাতন বাড়ছে: সমাধান খোঁজার তাগিদ
(last modified Fri, 01 Oct 2021 08:33:29 GMT )
অক্টোবর ০১, ২০২১ ১৪:৩৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বাল্য বিবাহ এবং কন্যা শিশু ও নারীধর্ষণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরীপ প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ মাসে ৮১৩ নারী ধর্ষণ ও ১১২ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। আর অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৪০ জন নারী। এছাড়া ২০২০ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে এক হাজার ২৫৩ টি  কন্যাশিশু।

জাতীয় ও স্থানীয় ২৪টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নারী ও শিশু নির্যাতনের সংবাদ  পর্যালোচনা করে ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২১’ প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উপস্থাপন করে ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার উল্লেখ করেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। প্রতি বছর এ মামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার রেডিও তেহরানকে বলেন, আমাদের সমাজে নারী-শিশু যারা নির্যাতন শিকার হন তারা  সবাই প্রতিবাদ করতে পারেন না। গণমাধ্যমে তোলপাড় না হলে এসব ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীনরা এসব ঘটনায় জড়িত থাকে। ফলে এই অপকর্মগুলো যারা করেন তাদের বিচার হয় না। তাই তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

৯ জেলায় সাড়ে ৭ হাজার বাল্যবিবাহ

ওদিকে, করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর দেশের ৯টি জেলায় ৭ হাজার ৬৭৭টি বাল্যবিবাহের তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা ও জামালপুর। এসব জেলার মধ্যে সর্বাধিক তিন হাজারের বেশি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে খুলনায়।

গত বছরের মার্চ থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। খোলার পরও অনেক ছাত্রী স্কুলে নিয়মিত আসছে না বলে নজরে আসে শিক্ষকদের। এরও আগে অনেক ছাত্রী নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্টও জমা দিচ্ছিল না। শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিপড়ুয়া অনেক ছাত্রীরই বিয়ে হয়ে গেছে। প্রধানত করোনাকালে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। গত বুধবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ, সমন্বয় ও সচেতনতা সৃষ্টি শাখা অনলাইনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসংক্রান্ত এক কর্মশালাতে এমন উদ্বেগের কথা উঠে আসে। কর্মশালায় অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অংশ নেন।

কর্মশালায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, অনেক সময় ঘরের ভেতরে সম্পন্ন হওয়া এসব বিয়ের খবর পাওয়া যায় না। তবে এটা ঠিক করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

একজন মেয়ে কখনো পরিবারের বোঝা নয় বরং সম্পদ: স্পিকার

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বাল্যবিয়ে নিরসনের ক্ষেত্রে অভিভাবক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কাজী ও নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের নান্দাইলে অনুষ্ঠিত করোনাকালীন কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক পরামর্শ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্পিকার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়েছে। কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতার উপরও এর প্রভাব পড়েছে। এসব সমস্যা উত্তরণে সামাজিকভাবে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজতে হবে।

তিনি বলেন, অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে একজন মেয়ে কখনো পরিবারের বোঝা নয় বরং সম্পদ। তাদের স্বাবলম্বী হবার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। তাদের স্বাবলম্বী করার মাধ্যমেই দেশ এবং জাতি এগিয়ে যাবে।#

পার্সটুডে/আবদূর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।