কোটা আন্দোলন,
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ–প্রতিবাদ, হবিগঞ্জে নিহত ১
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থন জানিয়ে এবং ‘ছাত্রহত্যার’ বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।
হবিগঞ্জে পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। আজ (শুক্রবার) বিকেলে হবিগঞ্জ শহরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৪)। তিনি পেশায় শ্রমিক। হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাড়ি ভাঙচুর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আজ ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বিকেলে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
তাছাড়া, আন্দোলনকারীরা ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে গণমিছিল শুরু করে শাহবাগ দিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে গিয়ে ঐ এলাকা অবরোধ করে রাখেন। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেখানে গণমিছিলে যোগ দেন।মিছিলকারীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে কিছু সময় বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের একটি সাধারণ স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
সিলেটে ‘গণমিছিলে’ পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণমিছিল’ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা বাধা ডিঙিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে।
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশ করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিতে খুলনায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। আজ জুমার নামাজের পর খুলনা নগরে এ ঘটে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সমন্বয়কদের যৌথ বিবৃতি
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকাকালে গত ২৮ জুলাই রাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন প্রত্যাহারের যে ঘোষণা তাঁরা দিয়েছিলেন, তা স্বেচ্ছায় দেননি।
আজ এক যৌথ বিবৃতিতে ছয় সমন্বয়ক এসব কথা বলেছেন। বেলা ১১টা ২২ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও নুসরাত তাবাসসুম গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডিবির হেফাজত থেকে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিবারের কাছে ফেরার পর আজ তাঁরা যৌথ বিবৃতি দিলেন। এ সময় তাঁরা বলেন, ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটক নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
সারা দেশে গ্রেপ্তার ১১ হাজার
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) পর্যন্ত সারা দেশে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২২২ জন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সহিংসতার পর এ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও ব্লক রেড দিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। #
পার্সটুডে/জিএআর/২