অসহযোগ আন্দোলন: ঢাকায় সংঘর্ষ, ৩ জেলায় নিহত ৪
(last modified Sun, 04 Aug 2024 06:44:56 GMT )
আগস্ট ০৪, ২০২৪ ১২:৪৪ Asia/Dhaka
  • ঢাকার পরিস্থিতি
    ঢাকার পরিস্থিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ (রোববার) থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলন শুরুর পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষ ও হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংঘর্ষে মুন্সীগঞ্জে দুইজন, রংপুরে একজন ও মাগুরায় একজন নিহত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতে রোববার সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা।

সকালে সাড়ে ১০টার পরে আন্দোলনকারীরা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা।

সংঘর্ষের সময় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে রাখা  গাড়িগুলো ভাঙচুর করা হয়। সে সময় হাসপাতালের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ইট পাটকেল ছুড়ছিলেন।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসিতেও অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন তারা। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সাইন্সল্যাব এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল ১১টার দিকে বাটা সিগন্যালের দিক থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল সাইন্সল্যাবের দিকে আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রেসক্লাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাদের স্লোগানে মুখর প্রেস ক্লাব সড়ক। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি), গণহত্যা ও নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন আন্দোলনকারীরা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখলে মিরপুর ১০

ধানমন্ডিতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের

রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় দলটির নেতা-কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। গুলি ছোড়ার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সড়কের রাপা প্লাজা ভবনের পাশে কিছু বিক্ষোভকারী বেলা ১১টার দিকে এসে দাঁড়ান। অন্যদিকে কিছুটা দূরে আসাদগেটের দিকের সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

উত্তরা আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ

রাজধানী উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

এর আগে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ধাওয়া দেয় বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা বিএনএস থেকে আজমপুর পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছেন। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিক্ষোভ প্রতিরোধে মিরপুর ১০ মোড়ে আ. লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রতিহত করতে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আজ রোববার সকাল থেকেই যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও  ঢাকা ১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েক শতাধিক সদস্য মিরপুর ১০ মোড়ে অবস্থান নেন।

আন্দোলনকারীদের দখলে মোহাম্মদপুর

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন আটকে দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত এই এলাকা। সকাল ১০টা থেকেই অলি গলি থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। কিছু জায়গা গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদরাসার ছাত্রদেরও দেখা গেছে। ওই এলাকায় কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।

মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ. লীগের সংঘর্ষে নিহত ২

মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।

আজ রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত দুইজনই পুরুষ এবং তারা পেশায় শ্রমিক। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

রংপুরে সংঘর্ষ, নিহত ১

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন।

মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহত

মাগুরায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (রাব্বি) নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক মহসিন উদ্দিন জানান, দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন।

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে আগুন

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে আগুন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে। রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করা হয়। হামলার মুখে ওই কার্যালয়ের সামনে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের কর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত আটটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদের ভবন দখল করে বানানো জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ২ গাড়িতে আগুন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশের দাউদকান্দি ইলিয়টগঞ্জের সড়ক অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২টি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় তারা। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হবার খবর পাওয়া যায়নি। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টায় দিকে মহাসড়কের রিলায়েবল পাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজার, বুড়িচং, দেবিদ্বার ভিরাল্লা, লাকসাম সড়কে ও বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে দেখা যায়নি তাদের।

খুলনায় জেলা আ. লীগ কার্যালয়ে আগুন

খুলনায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীরা এই আগুন দেয়।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলার শঙ্খমার্কেট এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের জেলা কার্যালয়টিতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর সোয়া ১২টার সময় এই প্রতিবেদন রেখা পর্যন্ত সেখানে আগুন জ্বলছিল।

জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারী পৌঁছালে তারা সেখানে কোনো বাধার মুখে পরেননি। আওয়ামী লীগের অল্প কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে থাকলেও আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় তারা চলে যান।#

পার্সটুডে/এমএআর/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।`

ট্যাগ