তুরস্কে শিশু শ্রম সম্পর্কে এপি'র প্রতিবেদন; চরম দারিদ্রের শিকার ২০ লাখ শিশু
(last modified Sun, 29 Dec 2024 12:06:21 GMT )
ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ ১৮:০৬ Asia/Dhaka
  • তুরস্কে শিশু শ্রম সম্পর্কে এপি'র প্রতিবেদন; চরম দারিদ্রের শিকার ২০ লাখ শিশু

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস তুরস্কে পীড়াদায়ক দারিদ্র এবং শিশুদের ওপর দারিদ্রের প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ঐসব দরিদ্র শিশুদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং খিদের জ্বালায় ডাস্টবিন থেকে খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে। 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, তুরস্কে জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের বিতর্কিত অর্থনৈতিক নীতির কারণে তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, অনেক পরিবার প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছে না ও বাসা ভাড়া মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে এমন পরিবারের শিশুরাও জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। বার্তা সংস্থা ইসনা'র বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে- ইউনিসেফ এবং তুর্কি পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে তুরস্কের ২ কোটি ২০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেছে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তুর্কি শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে ডাস্টবিনের খাবার সন্ধান করতে বাধ্য হচ্ছে। তুরস্কের বহু পরিবার বাড়ি-ভাড়াসহ অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে পারছে না, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ  করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের সন্তানদের জন্য উপযুক্ত জামাকাপড়, বই এবং জুতা কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।   

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, তুরস্ক সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী দেশ হিসেবে তুলে ধরছে। তারা বলতে চাইছে দেশটিতে একটি গতিশীল অর্থনীতি রয়েছে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। কিন্তু এই দেশে শিশু শ্রমের অস্তিত্ব এবং ডাস্টবিনের খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণের চিত্র এরদোগান সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। 

যাইহোক, ২০ বছর ধরে তুরস্কে ক্ষমতায় থাকা এরদোগান তার দলের সামাজিক কর্মসূচির প্রশংসা করে বার বারই দাবি করছেন যে, সেদেশে বঞ্চনা, দমন-পীড়ন ও দারিদ্র্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে।

গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান দাবি করেছেন, তুরস্কের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম এবং দারিদ্র্য সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আঙ্কারা থামবে না।

তুরস্কে চার সন্তানের অধিকারী একটি পরিবার সেদেশের সরকার থেকে প্রায় ১৭০ ডলার সহায়তা পায়, তবে এই অর্থের পুরোটাই বাড়ি ভাড়ার পেছনে ব্যয় হয়ে যায়, তাই শিশুরা এই ভাতা থেকে উপকৃত হতে পারছে না।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, তুর্কি জনগণ বলছে সরকারের ঘোষিত পরিসংখ্যানের চেয়ে সেদেশে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেশি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের ভর্তুকি প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবনে কোন বাস্তব প্রভাব ফেলতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেছেন, লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নাগরিকের জন্য সরকারের বরাদ্দ অপর্যাপ্ত এবং অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্য জামাকাপড় কেনা ও ভাড়া পরিশোধ-এই দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হন।

দারিদ্র বিষয়ক গবেষক হাজার ফুগোর মতে, ২০ লাখ তুর্কি শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। তুর্কি শিশুদের জন্য কাজের পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণ বিষয়ক যে পরিকল্পনাটি প্রস্তাব করা হয়েছে তা আসলে শিক্ষামূলক কর্মসূচি নয়, এটি সস্তা শ্রম আকর্ষণ করার পরিকল্পনা মাত্র।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব শিশু তাদের জীবনের প্রথম দিকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় তারা পরবর্তীতে আর শিক্ষা জীবনে ভালো করতে পারে না এবং তাদের জীবনটাই বঞ্চনার মধ্যে কেটে যায়।#

পার্সটুডে/এসএ/২৯