বেঁচে গেছেন হামাস নেতারা
কাতারের রাজধানীতে ইসরাইলি বিমান হামলা: হামাস নেতাদের হত্যাচেষ্টা
-
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলি বিমান হামলা
ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধবিমান কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-এর কার্যালয়ে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি গণমাধ্যম এটিকে এক 'হত্যা অভিযান' হিসেবে বর্ণনা করেছে।
দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে একটি 'সুনির্দিষ্ট হামলা' পরিচালনা করেছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়েই আলোচনার সময় নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
ইসরাইলের চ্যানেল ১৩-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকের সময় হামাস নেতা খালিল আল-হায়্যা এবং পশ্চিম তীরে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান জাহের জাবারিন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হামাসের দীর্ঘদিনের নেতা খালেদ মাশআলও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
হামাসের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, দোহায় ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত সকল সদস্য ইসরায়েলের হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন।
কাতারের নিন্দা:
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই “কাপুরুষোচিত ইসরাইলি হামলা”র নিন্দা জানিয়ে একে "আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও কাতারের নিরাপত্তার জন্য হুমকি" বলে উল্লেখ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়: “কাতার নিশ্চিত করছে যে, তার নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ সহ্য করা হবে না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত চলছে এবং শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি কাতারে ইসরায়েলি হামলাকে "অপরাধমূলক, অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং আন্তর্জাতিক আইন, কাতারের সার্বভৌমত্ব এবং জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে অভিহিত করেছেন। ফিলিস্তিন এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা সকলের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
সৌদি আরব ও ইয়েমেনের নিন্দা
সৌদি আরব এবং ইয়েমেন পৃথক বিবৃতিতে কাতারের দোহায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রিয়াদ একে ‘নৃশংস ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং কাতারের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে। তারা 'ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অপরাধমূলক লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘনের ফলে সৃষ্ট গুরুতর পরিণতি' সম্পর্কেও সতর্ক করেছে।
ট্রাম্পের হুমকি ও হামলা
এই হামলার দুই দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামাসকে তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একে 'শেষ সতর্কবার্তা' বলে উল্লেখ করেছিলেন।
রবিবার তিনি ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, “হামাসকে আমি সতর্ক করেছি। এটি আমার শেষ সতর্কবার্তা। এর পর আর কোনো সতর্কবার্তা থাকবে না!”
ইসরাইলের চ্যানেল ১২-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশ না করা এক ইসরাইলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দোহায় এই বিমান হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুমোদন দিয়েছিলেন।
ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম 'KANN' জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এই অভিযান চালানো হয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া
ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর মঙ্গলবার ক্রোয়েশিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন যে, দখলদার শাসনব্যবস্থা ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যা বন্দি বিনিময় ও গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত।
তিনি বলেন: “যুদ্ধ আগামীকালই শেষ হতে পারে।”
হামাসের অবস্থান
হামাস রবিবার জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে কিছু 'নতুন প্রস্তাব' দিয়েছে। আন্দোলনটি বলেছে, ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ করতে যে কোনো নতুন প্রচেষ্টাকে তারা স্বাগত জানায়।#
পার্সটুডে/এমএআর/৯