ইসরায়েলের পারমাণবিক গোপন তথ্য ফাঁস, ১৮৯ বিজ্ঞানীর তালিকা ইরানের হাতে
-
ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী সাইয়্যেদ ইসমাইল খাতিব
ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত বিপুল গোপন নথির নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। এসব নথিতে ১৮৯ জন পারমাণবিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞের পূর্ণ নাম, ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা এবং ইসরায়েলের অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে তাদের পেশাগত সম্পর্কের বিস্তারিত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গতরাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ডকুমেন্টারিতে জানানো হয়, 'মাকড়সার জাল' নামে জটিল এক অভিযানে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছে ইরানি গোয়েন্দারা। এসব নথির মধ্যে রয়েছে পরমাণু বিজ্ঞানীদের পাসপোর্ট কপি, সামরিক যন্ত্রপাতির ছবি, নকশা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রমাণাদি।
পার্সটুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোপন ভল্ট থেকে প্রাপ্ত নথিতে এমন সব স্থাপনার নকশা রয়েছে, যেগুলো শান্তিপূর্ণ গবেষণার পাশাপাশি সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য।
ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী সাইয়্যেদ ইসমাইল খাতিব জানিয়েছেন, ইরানি বিশ্লেষকরা এখনও এসব উপাদান খতিয়ে দেখছেন এবং তালিকাটি আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্যভাণ্ডার হাতে পায়, যেখানে গবেষক, বিজ্ঞানী এবং অস্ত্র প্রকল্পের সিনিয়র ম্যানেজারদের তালিকা রয়েছে। এদের মধ্যে মার্কিন ও ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন, যারা সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত।
ইসমাইল খাতিব বলেন, ইরানি গোয়েন্দারা বহুস্তরীয় জটিল এক অভিযানে অংশ নিয়ে শত্রু শাসনের গোপন ভল্টে প্রবেশ করে পারমাণবিক, সামরিক, গোয়েন্দা ও বৈজ্ঞানিক খাতের তথ্য সংগ্রহ করে। তিনি আরও জানান, এই ভাণ্ডারে সংবেদনশীল দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য সামরিক ও বৈজ্ঞানিক স্থাপনাসমূহের সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে। এছাড়াও এমন নথি রয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এবং মার্কিন সিনেটররা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থায় (আইএইএ ) প্রভাব খাটিয়েছেন এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে গোপন তথ্য পেয়েছেন।”
ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী জানান, জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন এসব নথি থেকে সংগৃহীত স্থানাঙ্কের ভিত্তিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ইসরায়েলের কিছু স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
তিনি বলেন, প্রকাশিত তথ্য মোট প্রাপ্ত নথির কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশ। তবে মন্ত্রীর মতে, এই সীমিত প্রকাশও শত্রু শাসনের দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা ও এর পৃষ্ঠপোষকদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে এবং তাদের ‘পারমাণবিক অস্পষ্টতার’ অবসান ঘটিয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, "ইসরায়েলের পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান, সামরিক সংস্থা, এমনকি সাধারণ নাগরিকদেরও একটি বড় অংশ ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। তারা এই বিপুল নথি শত্রুর বহুস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে ইরানে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে। এই সহযোগিতার পেছনে দুটি প্রধান উদ্দেশ্য কাজ করেছে: প্রথমত, আর্থিক প্রণোদনা ও অর্থপ্রাপ্তি; দ্বিতীয়ত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধী প্রধানমন্ত্রীকে (নেতানিয়াহু) ঘিরে তাদের গভীর ঘৃণা, যা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে রূপ নেয়।”
ইসমাইল খাতিব জানান, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এই বিপুল ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে মানব ও প্রাতিষ্ঠানিক উপাদানগুলোর পারস্পরিক নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা। এটি শত্রুর প্রকৃত হুমকি ও ষড়যন্ত্রের বাস্তব চিত্র প্রকাশ করবে।
মন্ত্রী আরও বলেন: “শত্রু এখনো ইরানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু দুর্বলচেতা লোক এর শিকার হয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একজন বিশ্বাসঘাতককে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।”
এর আগে ২০২৫ সালের জুনের শুরুতে ইরানের জাতীয় টেলিভিশন জানায়, তেহরান ইসরায়েল থেকে “অসংখ্য কৌশলগত ও সংবেদনশীল তথ্য ও নথি” সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার ফাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় কর্মকর্তারা এটিকে এক “অমূল্য গুপ্তধন” বলে অভিহিত করেছিলেন, যদিও তখন বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, এই অভিযানে ইসরায়েলের অতীত ও চলমান অস্ত্র প্রকল্প, পারমাণবিক পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জুন মাসে ইরান ইসরায়েলের একাধিক সংবেদনশীল সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল রেহোভতে অবস্থিত ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা কেন্দ্র ‘ওয়েইজম্যান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স’।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৫