আইসিসি'র ওপর নয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা; বৈশ্বিক আইন ও সাংস্থাগুলোর ওপর প্রকাশ্য আগ্রাসন
https://parstoday.ir/bn/news/event-i155288-আইসিসি'র_ওপর_নয়া_মার্কিন_নিষেধাজ্ঞা_বৈশ্বিক_আইন_ও_সাংস্থাগুলোর_ওপর_প্রকাশ্য_আগ্রাসন
পার্স-টুডে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দুই বিচারকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যা ইহুদিবাদ নামক বর্ণবাদ ও অপরাধী ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতি মার্কিন সরকারের নির্লজ্জ পক্ষপাতের দৃষ্টান্ত।
(last modified 2025-12-20T12:06:32+00:00 )
ডিসেম্বর ২০, ২০২৫ ১৭:১৬ Asia/Dhaka
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
    আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত

পার্স-টুডে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দুই বিচারকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যা ইহুদিবাদ নামক বর্ণবাদ ও অপরাধী ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতি মার্কিন সরকারের নির্লজ্জ পক্ষপাতের দৃষ্টান্ত।

গাজায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করার পর, বৃহস্পতিবার, ১৮ ​​ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দুই বিচারকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া বিচারকরা হলেন জর্জিয়ার প্রাক্তন বিচারমন্ত্রী গোচা লর্ডকিপানিদজে এবং মঙ্গোলিয়ার একজন বিচারক অর্ডেনেবালসোর্ন দামদিন।

এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে বিচারকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না এবং  তাদের সাথে সম্পদ-সংক্রান্ত বা আর্থিক যে কোনো লেনদেন স্থগিত করা হবে। লর্ডকিপানিদজে অতীতে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নতুন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেছে এবং এসব পদক্ষেপকে "একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার উপর স্পষ্ট আক্রমণ" বলে অভিহিত করেছে।

অপরাধী ও দখলদার ইরায়েল মার্কিন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক বার্তায় তার আমেরিকান প্রতিপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই পদক্ষেপকে "নৈতিক ও স্পষ্ট অবস্থান" বলে অভিহিত করেছেন।

এই পদক্ষেপের ফলে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার শিকার আইসিসি-বিচারকের সংখ্যা কমপক্ষে আট জনে দাঁড়িয়েছে। আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানসহ কমপক্ষে তিনজন প্রসিকিউটরও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি অতীতেও এই মামলার সাথে জড়িত অন্যান্য বিচারক এবং প্রসিকিউটরদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, তিনি ১৫ ডিসেম্বর, সোমবারে ঘোষিত বিচারিক সংস্থার  নতুন রায়েরর সাথে এই নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পর্কিত বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।

এটি এমন এক রায় যেখানে দুই বিচারক সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের সাথে একমত পোষণ করেছেন এবং ইসরায়েলি  প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার প্রাক্তন যুদ্ধমন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখেন।

 

রুবিও দাবি করেছেন: "আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে এবং তা সকল দেশের জন্য একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে।" তিনি ইহুদিবাদী ইসরায়েলি অপরাধের পক্ষে  আরও বলেন: "আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে তার অবস্থানের অপব্যবহার এবং আমেরিকান ও ইসরায়েলিদের ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করা সহ্য করব না।"

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনি মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য না রেখেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন: "আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপ এবং তার ভাষায় 'বেআইনি' পদক্ষেপগুলোর প্রতি উল্লেখযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকব।"

আইসিসির পক্ষ থেকে সোমবার জারি করা ৪৪ পৃষ্ঠার এই রায়ে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইয়াভ গ্যালান্ট উভয়ের বিরুদ্ধেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিরতিহীন আক্রমণের সময় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে বল অভিযোগ আনা হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্কের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলোর অন্যতম হিসাবে দেখা যেতে পারে। এই পদক্ষেপ কেবল একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ নয়, একইসাথে আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আইনের প্রতি ওয়াশিংটনের চ্যালেঞ্জকেও স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। আর এইসব মার্কিন পদক্ষেপের কয়েকটি কারণ হল: 

প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের প্রতি সংবেদনশীল।

দ্বিতীয়ত, এই পদক্ষেপগুলোর শেকড় রয়েছে আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির মধ্যেই যা প্রায়ই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে চায় এবং আন্তর্জাতিক সীমাবদ্ধতা এড়াতে চায়।

তৃতীয়ত, এসব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখাতে চায় যে তার স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপেরই পাল্টা জবাব দেয়া হবেই। 

চতুর্থত, এইসব পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগকেও প্রতিফলন করে। দেশটির ঘরোয় রাজনৈতিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার গ্রহণ করাকে দুর্বলতা বা পিছু হটা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

মোটকথা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে বিশ্বব্যাপী আইন ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর স্পষ্ট আক্রমণ হিসেবে দেখা উচিত। এই পদক্ষেপগুলো দেখায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ এবং জবাবদিহিতার উর্ধ্বে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের সবচেয়ে মৌলিক নীতিগুলোও পদদলন করতে ইচ্ছুক।

এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর চাপ নয়, একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী আইনি ব্যবস্থার জন্যও একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ।  #

পার্স টুডে/এমএএইচ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।