সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার
(last modified Mon, 27 Dec 2021 14:26:19 GMT )
ডিসেম্বর ২৭, ২০২১ ২০:২৬ Asia/Dhaka
  • সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার

ভারতে যেসব শরণার্থী বহু বছর ধরে নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ/ক্যা) বাস্তবায়নের উপহার পেতে পারেন। ২০১৯ সালে ‘সিএএ’ সংসদে পাস হওয়ার পর এতদিনেও তা কার্যকর করা হয়নি, কারণ, এর বিধিমালা সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় সরকার এবার ‘সিএএ’ কার্যকর করার মনস্থির করেছে। মনে করা হচ্ছে, উত্তর প্রদেশসহ পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনকে সামনে রেখে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ক্রমাগত জোর দিয়ে আসছে যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের সঙ্গে ন্যায়বিচার (নাগরিকত্ব প্রদান) করা উচিত। বলা হচ্ছে, সরকার থেকে সঙ্ঘের নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এবার বিধিমালা প্রণয়নের ১০ জানুয়ারির সময়সীমা বাড়ানোর জন্য কোনও অনুরোধ করা হবে না এবং তার আগেই ‘সিএএ’-এর বিধিগুলো ঠিক করে ‘সিএএ’ কার্যকর করা হবে।     

কেন্দ্রীয় সরকার এমন সময়ে ওই পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে, যখন উত্তর প্রদেশসহ ৫টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা সরকার। মুসলিমদের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই আইনের বিরোধিতা করা হচ্ছে। দিল্লির শাহীনবাগেও ওই ইস্যুতে এর আগে দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘এনআরসি ও সিএএ’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।     

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের সময় বলেছিলেন,  সারা দেশে কোভিড টিকা দেওয়া শেষ হওয়ার পরে, ‘সিএএ’ কার্যকর করা হবে। বর্তমানে টিকা প্রদান কর্মসূচি কার্যত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন থাকা বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৩০ টি বিধানসভা আসনে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রায় ১.৫ কোটি ভোট রয়েছে বলে মনে করা হয়।  

কোনও আইন তৈরির পরে তার বিধিমালা ৬ মাসের মধ্যে প্রকাশ করতে হয় যাতে সেই আইন কার্যকর করা যায়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাস হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এর বিধিমালা ঠিক করা হয়নি। বিধি প্রণয়নের জন্য, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালের অক্টোবর, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ২০২১ সালের মে মাসে সংসদের অধীনস্থ আইন প্রণয়ন কমিটিগুলোর কাছ থেকে সময়সীমার বর্ধিতকরণ চেয়েছিল। এবার সরকারের কাছে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারী সময়সীমা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার আর মেয়াদ বাড়াতে চাইবে না।

১০টি রাজ্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’র (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করেছে। কিন্তু তাদের কারোরই সরাসরি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা ‘সিএএ’/ক্যা’র বিরোধিতা নেই। সেজন্য, সরকার আশা করছে, রাজ্যগুলোও ওই আইন বাস্তবায়নে বাধা দেবে না। 

ড. ইমানুল হক

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সিএএ/ক্যা’র নামে ওরা নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু ওরা নিজেরাই বলছে ২০১৭/২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষ থেকে ৬ লাখ মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ নাগরিকত্ব নিয়েছেন অল্প কয়েকজন মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে-ভারতের নাগরিক যারা আছেন তাদের আবার নতুন করে নাগরিকত্ব দেবে? না কি তাদেরকে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখবে? এটা হচ্ছে মূল প্রশ্ন? কতজন আবেদন করেছেন নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য? নয়া যে আইন তৈরি করা হয়েছে সেই আইনের যা প্রস্তাবিত খসড়ার আলোচনায়  জানা গিয়েছিল যে খুব স্বল্প কিছু মানুষ নাগরিকত্ব পাবেন।’ 

‘ভারতবর্ষ ছেড়ে যারা চলে যাচ্ছেন তাদের আগে ঠেকাক কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর ভাববে বিদেশিদের ভারতে আনার কথা। যে দেশের সরকার নিজের দেশের নাগরিকদেরই ধরে রাখতে পারে না, তারা আবার অন্য দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দেবেন এটা আশা করা বাতুলতা’ বলেও মন্তব্য করেন ড. ইমানুল হক।#         

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ