দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়া প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তোলপাড়
(last modified Wed, 17 Aug 2022 12:12:32 GMT )
আগস্ট ১৭, ২০২২ ১৮:১২ Asia/Dhaka
  • দিল্লিতে রোহিঙ্গা
    দিল্লিতে রোহিঙ্গা

ভারতের দিল্লিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাট দেওয়া সংক্রান্ত ইস্যুতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা এমনকি বিজেপি নেতারাও। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ‘আরএসএস’ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হলে অবশেষে আজ (বুধবার) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয়েছে।     

গোটা বিতর্কের সূত্রপাত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর টুইট বার্তা নিয়ে। হরদীপ  সিং পুরী আজ টুইট করেছেন, যারা দেশে আশ্রয় চেয়েছে, ভারত সবসময় তাদের স্বাগত জানিয়েছে। একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, সমস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকার অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য তৈরি করা ফ্ল্যাট ইডব্লুএস ফ্ল্যাটে স্থানান্তর করা হবে। তাদের মৌলিক সুবিধা, ইউএনএইচআরসি আইডি এবং সার্বক্ষণিক দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।  

যারা ভারতের শরণার্থী নীতিকে ‘সিএএ’র সঙ্গে জুড়ে বিরোধিতা করে নিজেদের কেরিয়ার তৈরি করতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য দুঃসংবাদ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী।   

মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর ওই টুইট বার্তার পরেই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন ‘আম আদমি পার্টি’ বা ‘আপ’। অন্যদিকে, বিজেপির কয়েকজন নেতাও ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’। সূত্রের খবর, ওই সিদ্ধান্তে আরএসএসও  ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে।   

রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনকারী বিজেপি : আম আদমি পার্টি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজেপিকে টার্গেট করেছে আম আদমি পার্টি। ‘আপ’  নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ টুইট বার্তায় বলেছেন, বিজেপিই রোহিঙ্গাদের দেশে এনে বসতি স্থাপন করছে। এমনকি বিজেপির লোকজনও পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বিজেপির একটা বড় ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেল। বিজেপি স্বীকার করেছে, দিল্লিতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসিত করেছে বিজেপি। এখন তাদের পাকা বাড়ি ও দোকান দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। দিল্লির মানুষ এটা হতে দেবে না।  

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র এক বার্তায় বলেছেন, 'রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি উদ্বাস্তুরা শরণার্থী নয়, তারা ‘অনুপ্রবেশকারী’। তাদের বসতি থেকে মাদক, মানব পাচার, জিহাদের মতো কালো ব্যবসা পরিচালিত হয়। তাদের হেফাজতে নেওয়া এবং তারপর তাদের নির্বাসিত করাই একমাত্র সমাধান। তিনি রোহিঙ্গাদের আগে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এবং আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু-শিখদের ফ্ল্যাট এবং নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীরা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ ছাড়াই বস্তিতে বাস করতে হচ্ছে। এই অদ্ভুত উদ্বাস্তু নীতির সুফল তাদের কাছে পৌঁছায়নি বলেও মন্তব্য করেন ওই বিজেপি নেতা।    

প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) 

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি অলোক কুমার বলেছেন,  হরদীপ সিং  পুরীর রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার বিবৃতি দেখে তিনি হতবাক! আমরা হরদিপ পুরীকে  ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে রোহিঙ্গাদের ভারতে কখনই গ্রহণ করা হবে না। অলোক কুমার বলেন,  রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ নয়, তারা ‘অনুপ্রবেশকারী’। সুপ্রিম কোর্টেও ভারত  সরকারের পক্ষে এই অবস্থান রয়েছে। আমরা ভারত সরকারের কাছে আবেদন করব বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে এবং রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা না করে তাদের বিতাড়নের ব্যবস্থা করতে।

ক্ষুব্ধ আরএসএস

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা ‘আরএসএস’  সূত্রে খবর, সঙ্ঘও ওই সিদ্ধান্তে খুশি নয়। সঙ্ঘ সূত্র বলছে, এই সিদ্ধান্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা ‘সিএএ’র বিরুদ্ধে যাবে। এ ছাড়াও অসমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে ‘ডিটেনশন সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে তার কী হবে?  অন্যদিকে, সরকারি সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আনুষ্ঠানিক স্পষ্টীকরণের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।   

ওই ইস্যুতে ব্যাপক তোলপাড়ের মধ্যে অবশেষে আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে মিডিয়া রিপোর্টের বিষয়ে, এটি স্পষ্ট করা হচ্ছে যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নয়া দিল্লির বক্করওয়ালায় রোহিঙ্গাদের ইডব্লিউএস ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশ দেয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দিল্লি সরকার রোহিঙ্গাদের নতুন জায়গায় স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ‘জিএনসিটিডি’কে নির্দেশ দিয়েছে যে রোহিঙ্গা অবৈধ বিদেশীরা বর্তমান অবস্থানে থাকবে তা নিশ্চিত করতে কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতোমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের নির্বাসনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে তুলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, অবৈধ বিদেশীদের আইন অনুযায়ী তাদের নির্বাসন না হওয়া পর্যন্ত ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। দিল্লি সরকার বর্তমান স্থানটিকে ‘ডিটেনশন সেন্টার’ হিসেবে ঘোষণা করেনি। অবিলম্বে তা করতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ