দিল্লির আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করা হল বিদ্যুতের লাইন
কেরালায় ‘বিবিসি’র তথ্যচিত্র প্রদর্শন করল কংগ্রেস
ভারতের কেরালায় কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্র করে ‘বিবিসি’র বিতর্কিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চন’ প্রদর্শন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আজ (শুক্রবার) দিল্লির আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করার চেষ্টা করলে স্ক্রিনিংয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে এবং পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌছে পুলিশ স্ক্রিনিংয়ের জন্য লাগানো পর্দা সরিয়ে ফেলে। জানা গেছে, পর্দা সরানোর পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে বসে ল্যাপটপে তথ্যচিত্রটি দেখেছেন।
এর আগে ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদী কোয়েশ্চন’ তথ্যচিত্রটি দিল্লি, হায়দরাবাদ, চণ্ডীগড়, কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক জায়গায় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়। এসময়ে কমপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী বিতর্কিত ওই তথ্যচিত্রটি দেখেন। এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি দেখানো হবে বলে জানা গেছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন কোনও মতেই করতে দিতে রাজি নন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনামূলক ‘বিবিসি’র তথ্যচিত্র শেয়ার করা টুইটগুলোকে ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে যেসব টুইটের মাধ্যমে ওই তথ্যচিত্রের ইউটিউব লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে সেগুলোও ব্লক করা হয়েছে।
এদিকে, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং কেরালার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী একে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনি বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে আপত্তি জানিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। অনিল অ্যান্টনির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপর বিবিসি তথ্যচিত্রে আপত্তি জানানোর পরে তাকে তার টুইট মুছতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। ওই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অবস্থান থেকে ভিন্ন মতামত প্রকাশ করে অনিল অ্যান্টনি এক বার্তায় বলেন, ‘ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের উপর ব্রিটিশ সম্প্রচারকদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করবে।’ তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেস দলের কারও সাথে তার কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে, বিদেশীদের বা তাদের সংস্থাগুলোকে আমাদের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়৷ কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা সংসদ সদস্য শশী থারুর অবশ্য অনিল অ্যান্টনির ওই পর্যবেক্ষণকে ‘অপরিণত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, বিবিসির ওই তথ্যচিত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি নেতা রাহুল গান্ধী এমপি। জম্মু-কাশ্মীরে ‘ভারত জোড়ো’ পদযাত্রা কর্মসূচিতে সাংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা, দমন এবং ভীতি প্রদর্শন করে সত্য প্রকাশে বাধা দেওয়া যাবে না। সত্য সামনে আসবেই। এটা অসহিষ্ণুতার রাজনীতি। সত্যকে আড়াল করা যায় না। সত্য উজ্জ্বল হয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে রয়েছি। আপনি যতই সত্য গোপন করুন না কেন, তা জয়ী হবে।
বিবিসির তথ্যচিত্র আপত্তি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে তথ্যচিত্রটি তৈরি বলে মন্তব্য করেছে। তথ্যচিত্রে গুজরাট গণহত্যার সময়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা সম্পর্কে সমালোচনা থাকায় একাধিক ইউটিউব ভিডিও প্রচার ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ইউ টিউবের লিঙ্ক থাকায় ৫০টির বেশি টুইটার পোস্ট ব্লক করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতে কার্যত ওই তথ্যচিত্রের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ওই ঘটনাকে ‘সেন্সরশিপ’ বলে অভিহিত করেছেন বিরোধীরা।
২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সেখানে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। গুজরাট দাঙ্গার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিন চিট দিয়েছে। ওই ঘটনায় মোদীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।