মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানাল কুকিরা, মিজোরামে প্রতিবাদ মিছিল
(last modified Wed, 26 Jul 2023 10:08:51 GMT )
জুলাই ২৬, ২০২৩ ১৬:০৮ Asia/Dhaka
  • মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি জানাল কুকিরা, মিজোরামে প্রতিবাদ মিছিল

ভারতে বিজেপিশাসিত অশান্ত মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলেছে কুকিরা। মণিপুরের ৯টি কুকি উপজাতির প্রতিনিধিত্বকারী জোমি কাউন্সিল স্টিয়ারিং কমিটি (জেডসিএসসি) ওই দাবি জানিয়েছে।  

অন্যদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের একটি সংগঠন (COCOMI) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কুকি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা না করার আবেদন জানিয়েছে। রাজ্যটিতে ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়কে ‘তপসিলি উপজাতি’র মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কুকি ও অন্যান্য উপজাতি সংগঠন যৌথভাবে মাঠে নামায় গত ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে। 

জোমি-কুকি সংগঠন ‘জেডসিএসসি’ রাজ্যের উপজাতি ও অ-উপজাতিদের মধ্যে চলমান সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপও চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠিতে ‘জেডসিএসসি’বলেছে, ‘মণিপুরে  আদিবাসীদের উপর হামলার মূল কারণ নিয়ে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘এনআইএ’ তদন্ত করা হোক এবং সমস্ত উপত্যকা জেলায় সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ‘আফস্পা’ পুনরায় প্রয়োগ করা হোক, যাতে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে পারে।’    

ওই চিঠিতে, ‘জেডসিএসসি’প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, দেশের এই স্পর্শকাতর ও কৌশলগত পূর্ব কোণে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে আপনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে সাংবিধানিক ও আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতার কারণে অবিলম্বে ৩৫৬ ধারা (রাষ্ট্রপতির শাসন) কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে ৫ হাজারের বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং কয়েক লাখ গোলাবারুদ লুট করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইনটি উপত্যকার সমস্ত জেলায় আবার কার্যকর করা উচিত, যাতে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।

চিঠিতে ‘জেডসিএসসি’ আরও অভিযোগ করেছে কুকি-জোমি আদিবাসীদের প্রতি অবিচার, প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা এবং বৈষম্য কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ (দুই নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো) যা সমগ্র   বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছে তা মণিপুরের বর্তমান সংগ্রামের একটি উদাহরণ মাত্র। চিঠিতে দুই কুকি নারীর সঙ্গে বর্বরতার ভিডিওর উল্লেখ রয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটে গত ৪ মে এবং গত ১৯ জুলাই এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সেটি ভাইরাল হয়।

অন্যদিকে, মণিপুরে ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা COCOMI  গতকাল (মঙ্গলবার) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কুকি চরমপন্থি গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা না করার জন্য আবেদন করেছে। তাদের দাবি, রাজ্যে সহিংসতার জন্য এই গোষ্ঠীগুলোই দায়ী। কুকি চরমপন্থি গোষ্ঠীতে বিদেশি সদস্যও রয়েছে বলে দাবি করেছে মেইতেই সংগঠনটি।

মঙ্গলবার ইম্ফলে COCOMI সমন্বয়কারী জিতেন্দ্র নিঙ্গোম্বা বলেন, COCOMI তার দাবির উপর জোর দেওয়ার জন্য ২৯ জুলাই একটি সমাবেশের আয়োজন করবে যে রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতার সাথে আপস করা যাবে না এবং আলাদা প্রশাসনের অনুমতি দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে, দিল্লিতে COCOMI মুখপাত্র কে অথোবা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মণিপুরে সহিংসতা বন্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, গুজরাটে ২০০২ সালের দাঙ্গার সময় চার দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল, তাহলে মণিপুরের মতো রাজ্যে কেন সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?

এদিকে, মণিপুরে কুকি সম্প্রদায়ের সমর্থনে এবং উপজাতিদের উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল (মঙ্গলবার) মিজোরামে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। এর সমর্থনে পরিবহন পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা সরকারি অফিসগুলোও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তানলুইয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ওই মিছিলে শামিল হন।বিজেপিশাসিত মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেইরা উপজাতি কুকি এবং জো সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। ‘সেন্ট্রাল ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (সিওয়াইএমএ), মিজো জিরলাই পাওল (এমজেডপি)সহ পাঁচটি মিজো নাগরিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ওই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। জানা গেছে, মণিপুরের জো উপজাতিরা আদতে মিজো জনগোষ্ঠীর অংশ। অভিযোগ- গত ৩ মে থেকে মণিপুরে ধারাবাহিক সহিংসতার শিকার হয়েছে তারা। কয়েক হাজার জো উপজাতির নাগরিক মণিপুর থেকে মিজোরামেও আশ্রয় নিয়েছেন।

অন্যদিকে, পিস অ্যাকর্ড মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (পামরা) নামে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের সংগঠনের হুঁশিয়ারির জেরে ইতোমধ্যেই মিজোরাম ত্যাগ করেছেন কয়েক হাজার মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষজন। মণিপুরের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন তারা। মিজোরাম সরকারের বিবৃতিতে মেইতেইদের জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলা হলেও আতঙ্কিত মেইতেইরা এখনও মিজোরামে ফেরেননি।  #            

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৫  

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ