ভারতের বিভিন্ন শহরে ইসরাইলবিরোধী মিছিল ও বিক্ষোভ-সমাবেশ
ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, উত্তর প্রদেশের হামিরপুর জেলায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগে আতিক চৌধুরী এবং সুহেল সিদ্দিকি নামে দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে সুহেল আনসারিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ অন্যজনের খোঁজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি খারাপ করার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল (শনিবার) পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ শামিল হন। ওই ইস্যুতে গত (শুক্রবার) ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে প্রতিবাদী জনতা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। বেঙ্গালুরুর জামিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা মাকসুদ ইমরান বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন, ইহুদিরা জোর করে মুসলমানদের তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করছে। গাজা উপত্যকায় বিপুল সংখ্যক মুসলমান নির্যাতিত হচ্ছে। আল আকসা মসজিদে ইবাদত নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুরে মুসলিমরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিল ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। জামশেদপুরের ম্যাঙ্গো আজাদ নগরে জুমা নামাজের পর প্রতিবাদী জনতা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানান এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অবিলম্বে ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এখানে ফখরুদ্দিন আনসারি নামে এক ব্যক্তি বলেন, ইসরাইল গত ৭০ বছর ধরে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় বিশ্বের সকল মুসলিম দেশকে একসাথে সোচ্চার হতে হবে।
উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে। লক্ষনৌয়ের আসিফী মসজিদে জুমার নামাজের পর ইসরাইল এবং আমেরিকা বিরোধী শ্লোগান ওঠে। এখানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রার্থনা করা হয়।
বিহারের কিষাণগঞ্জে জুমার নামাজের পর যুবকরা রাস্তায় নেমে ফিলিস্তিনের সমর্থনে শ্লোগান দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কিষাণগঞ্জের প্রধান বাজারে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় এবং বিক্ষোভরত জনতার পক্ষ থেকে ‘তোমার আমার সম্পর্ক কী? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শ্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় ইহুদিবাদী ইসরাইলি পতাকায় আগুন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে শান্তির আবেদন জানান কিষাণগঞ্জের জেলা প্রশাসক তুষার সিংলা। অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে বলেছে, বিহারে লোকেরা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে কিন্তু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে মহাজোট সরকার নীরব রয়েছে।
কেরালা রাজ্যে ভারতের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপিআই) সদস্যরা তিরুবনন্তপুরমে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন। জম্মু-কাশ্মীরের বাডগামে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময়ে প্রতিবাদী জনতা ইসরাইলের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। শুক্রবার লাদাখের কারগিল শহরেও কয়েকশ বিক্ষোভকারী মিছিল করেছে এবং গাজা ও ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে। জমিয়তে উলামা ইসনা আশরিয়া এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
তামিলনাড়ুতেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। তামিলনাড়ুর মুসলিম মুনেত্রা কাজগাম চেন্নাইয়ে ফিলিস্তিন ও হামাসের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। শুক্রবার তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদেও ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিল ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
এদিকে, বিজেপিশাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা যারা হামাসকে সমর্থন করে তারা সন্ত্রাসবাদের সমর্থক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনই বলেন, হামাসকে কারো সমর্থন করা উচিত নয়। হামাসকে সমর্থন করার অর্থ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন। যারা তাদের সমর্থনে মিছিল করতে দাঁড়িয়েছে তাদের কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
এদিকে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ ইস্যুতে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ভারত সরকারের মতামতের পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপ গ্রহণযোগ্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোক বা ধর্মীয় স্থান যে কোনও জায়গা থেকে কোনও ধরণের উন্মাদনামূলক বিবৃতি দেওয়া উচিত নয়। বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হলে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১৫