মার্চ ১৯, ২০২৪ ২০:০৩ Asia/Dhaka

ভারতের নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার 'কেরালা স্টোরি' নামের একটি ছায়াছবি প্রচারের অনুমতি দিয়ে এটা প্রমাণ করেছে যে উগ্রবাদী নানা বার্তা প্রচারের জন্য এই সরকার প্রোপাগান্ডা শিল্পকে ব্যবহার করছে।

এইসব বার্তা কারো কারো স্বার্থের জন্য লাভজনক হলেও সভ্যতা হিসেবে ভারতের যে ইমেজ বা ভাবমূর্তি রয়েছে সেদিক থেকে ভারতীয় সমাজের ক্ষমতার ভিতগুলোর জন্য ধ্বংসাত্মক। 

ভারতের মতো একটি দেশে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মধ্যে বিভাজন দীর্ঘমেয়াদে এ দেশের জাতীয় পরিচয়কে দুর্বলকারী চলক বা ফ্যাক্টর যে ভারত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত। দেশটির রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। এ ধরনের পরিস্থিতি সেইসব দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে যারা ভারতীয় সমাজকে শাসনে রাখতে চায়, বিশেষ করে যে দেশগুলো অতীতে ঔপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে ভারতের কাছ থেকে বিপুল ফায়দা লুটেছে।  

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পশ্চিমারা সব সময় এ দাবি করে আসছে যে তারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লালনভূমি এবং তারা ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে উদার দৃষ্টি দিয়ে স্বাগত জানায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন সমাজে তারা পাশ্চাত্যের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তাই এটা স্বাভাবিক যে তার বিপরীতে একজন প্রতিযোগীকে দেখা তার স্বার্থের জন্য বেশ ক্ষতিকর, তাও সেই প্রতিযোগী যদি হয় পুরানো মহাদেশ ও প্রাচ্যের সংস্কৃতি, অর্থাৎ এশিয়া থেকে।

যদি ভারত ও বিজেপি দল এই বিষয়টি উপলব্ধি করে, তবে সন্দেহজনক, চরমপন্থী এবং উপনিবেশবাদী অভিনেতাদের ভারতীয় ব্র্যান্ডটি যে সামাজিক বর্ণনার উপর নির্ভরশীল তা ধ্বংস করার অনুমতি দেবে না। আর এভাবে ভারতকে অন্যান্য ধর্মের সাথে যুদ্ধের ভূমি হিসাবে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা যাতে স্মরণ করে তা ঘটারও সুযোগ দেবে না ভারত সরকার ও বিজেপি।

কেরালা স্টোরি নামক ছায়াছবি প্রদর্শনে ভারতীয় মুসলমানরা অসন্তুষ্ট 

কেরালা স্টোরি হচ্ছে এমন এক কল্পিত গল্প যেখানে দেখানো হয়েছে যে হিন্দু নারীকে মুসলমান বানানো হয়েছে দায়েশ বা আইএস কর্মীর মাধ্যমে এবং তারা উগ্রবাদী হয়েছে। এ ছায়াছবিতে এভাবে ভারতের মুসলমানদের সম্মান বা ইমেজ ধ্বংস করা হয়েছে এবং দায়েশ বা আইএস তথা ইসলামী রাষ্ট্র নামক একটি লেবেল বা শিরোনাম ব্যবহার করে ইসলামকে সহিংসতায় ভরপুর একটি অমানবিক ধর্ম হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মানুষ তথা প্রায় বিশ কোটি মানুষ (১৯ কোটি ৬০লাখ) এই ছায়াছবি দেখেছে। এই ফিল্ম দেশটির সর্বাধিক বিক্রিত ছায়াছবিগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল। 

লেখক ও সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী ভারতীয়দের কাছে সিনেমার রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। তাই গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি নজিরবিহীন শক্তিশালী মাধ্যম।

 গত বছরের (২০২৩) মে মাসে এই ছায়াছবি প্রদর্শন করা হয় যখন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ণাটক রাজ্যে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এই নির্বাচনে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতা ঘটেছে।

মোদি এক নির্বাচনী জনসভায় এই ছায়াছবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। বিরোধী দল সন্ত্রাসী প্রবণতাগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। মোদির দলের সদস্যরা বিনামূল্যে এই ছায়াছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন। 

বিজেপি'র এক সমাবেশে উপস্থিত মোদি 

এ ছাড়াও বিজেপি'র নেতৃত্বাধীন ভারতের দু"টি রাজ্য সরকার দর্শকদের উৎসাহ যোগাতে এই ছায়াছবির টিকিটের কর কমিয়ে দিয়েছিল।  

এ ধরনের আরেকটি ছায়াছবি হিসেবে 'দ্য কাশ্মির ফাইলস' নামক ছায়াছবির নাম উল্লেখ করা যায়।  এ ছায়াছবিতে ১৯৮৯-৯০ সালে সংঘটিত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভয়াবহ নানা সংঘর্ষের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। 'গোধরা' নামক ছায়াছবিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এতে ২০০২ সালে একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ওই ঘটনায় ৫৯জন হিন্দু যাত্রী প্রাণ হারায়। আর এ ঘটনার অজুহাত দেখিয়েই গুজরাটে মুসলিম-বিরোধী ব্যাপক দাঙ্গা ও হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল। 

'দ্য কাশ্মির ফাইলস' নামক ছায়াছবির মাধ্যমে কাশ্মিরে সাম্প্রদায়িক বিরোধ উস্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। 

দ্য কাশ্মির ফাইলস' নামক ছায়াছবির মাধ্যমে কাশ্মিরে সাম্প্রদায়িক বিরোধ উস্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে

বিজেপির কোনো কোনো শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে ইসরাইলের দহরম-মহরম অনেক বেড়েছে। ভারতে তৎপর মার্কিন ও ফরাসি সূত্র এই সন্দেহ জোরদার করে তুলছে যে একটি অভারতীয় ও অমুসলিম শক্তি সেখানকার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর কাজ করছে। আর এ বিষয়টি ভারতে নানা সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ইমেজকে ধ্বংস করছে এবং এভাবে ভারত এক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে খুব কম খরচেই ইসরাইলের তুলনায় মুসলমানদের শক্তি কমে যাচ্ছে। 

উপনিবেশবাদী দেশগুলো জাতিগত ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব বাধিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দুর্বল করে যা এই দেশগুলোর এক বিশেষ কৌশল। আর ভারতের বিজেপিকে এ কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক করা জরুরি। বিজেপি যদি এমন ধোঁকার শিকার হয়ে থাকে তাহলে তা ভারত ও খোদ বিজেপির জন্য রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত অনেক আঘাত বয়ে আনবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


       

ট্যাগ