দিল্লির জেএনইউতে মুখোশধারীদের হামলা, নিন্দায় সোচ্চার বিরোধীরা
(last modified Mon, 06 Jan 2020 10:22:19 GMT )
জানুয়ারি ০৬, ২০২০ ১৬:২২ Asia/Dhaka
  • দিল্লির জেএনইউতে মুখোশধারীদের হামলা, নিন্দায় সোচ্চার বিরোধীরা

ভারতের দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা আহত হওয়ায় বিরোধীদলীয় নেতারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বামপন্থি ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের অভিযোগ, গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠন ‘এবিভিপি ’আশ্রিত দুর্বৃত্তরাই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এবিভিপি অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গতকাল (রোববার) রাতে জেএনইউতে ওই হামলার ঘটনায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন জেএনইউয়ের ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট’-এর অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। সুচরিতা সেনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কোনও শব্দ দিয়েই এই ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায় না। এটা গণতন্ত্রের লজ্জা!’ জেএনইউ ও শাহীনবাগ, দুই আন্দোলনেরই পাশে দাঁড়াতে তৃণমূলের এমপি দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে এক দল প্রতিনিধি আজ সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন।

প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এমপি ওই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা আমাদের দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সাহসী ছাত্রদের কণ্ঠস্বরকে ভয় পাচ্ছে। আজ জেএনইউতে হওয়া সহিংসতা সেই ভয়েরই প্রতিফলন।’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, আইনরক্ষা যাদের কাজ তাদেরই চোখের সামনে দিয়ে মুখোশধারী হামলাকারীরা ক্যাম্পাসে ঢুকেছে। এসএফআই নেত্রী এবং ছাত্র সংসদের সভানেত্রী রক্তাক্ত ঐশী ঘোষের ভিডিও পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, সারা দেশকে এমনই রক্তাক্ত করতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি’র বাহিনী। তাদের রুখে দিতে হবে।

জেএনইউয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কানহাইয়া কুমারেরর অভিযোগ, সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিএসপি নেত্রী মায়াবতী আজ (সোমবার) বলেছেন, ‘জেএনইউতে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সাথে সহিংসতা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং লজ্জাজনক! কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘটনাটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। এছাড়াও, এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হলে ভাল হবে।’

পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (জুটা)-এর সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাঙ্গণে এমন ঘটনা ঘটার পরে সভ্য দেশে বাস করছি, এই দাবি কী ভাবে করব? পুলিশের উপস্থিতিতে যেভাবে রড, লাঠি নিয়ে হামলা হয়েছে, তাতে আমরা স্তম্ভিত! এই গুন্ডারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক বলেই জানতে পেরেছি।’

এ প্রসঙ্গে জেএনইউয়ের সাবেক ছাত্র ও পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুদল মাতিন আজ (সোমবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘জেএনইউয়ের সাবেক ছাত্র-ছাত্রী যারা পশ্চিমবঙ্গে আছেন, আমরা গতবারে একটা কর্মসূচি পালন করেছি এবারেও আমরা মিটিংয়ে বসে আমরা বড় প্রতিবাদ সভা করব। প্রতিবাদ সভা বিভিন্ন জায়গায় চলছে। এই প্রতিবাদসভা শিক্ষক সমাজ, ছাত্র সমাজের পাশপাশি বড় যে মুসলিম সমাজ যারা অনেকদিন ধরে প্রতিবাদ করছে কিন্তু গণমাধ্যম তাঁদেরকে ঠিক  কভার করে না। এবার সময় এসেছে, শিক্ষিত সমাজ, সুশীল সমাজের মানুষজনের সঙ্গে যে মুসলিম সমাজ গ্রাম বাংলায় বা ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ করছে একসঙ্গে এসে প্রতিবাদ করার। ওই ঘটনা নিয়ে আর পিছিয়ে আসার কোনও জায়গা নেই। প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকছে না। রাস্তাই এবার নয়া রাস্তা দেখাবে।’

তিনি বলেন,  ‘আগেও সহিংসতা দেখা গিয়েছে। জেএনইউয়ের ছাত্র নাজিব আহমেদকে গত দু’বছরের মধ্যে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিত ভেমুলা হোক বা জেএনইউয়ের নাজিব আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। গতকালের  ঘটনা বিজেপি-আরএসএসের ফ্যাসিজমের একটা অংশ। নাজিব থেকে শুরু করে গতকালের জেএনইউয়ের তাণ্ডব।’

শহীনবাগ এবং দিল্লির যেসমস্ত জায়গায় প্রতিবাদ হচ্ছে বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিমরা শাহীনবাগে প্রতিবাদ করছে তাঁদেরকে ওঁরা (বিজেপি-আরএসএস) একধরনের ভয় দেখাতে চাচ্ছে। ওঁরা হিন্দু রাষ্ট্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলেও অধ্যাপক আবদুল মাতিন মন্তব্য করেন।

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন দমনে ‘পুলিসি আগ্রাসনে’র বিচার চেয়ে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ধর্না-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জামিয়া নগর শাহীনবাগের নারীরা। একইসঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ‘সিএএ ও  জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এনআরসি’ বিরোধিতাও চলছে। এখানে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। 

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যতদিন সরকার দাবি মেনে না নেবে, ততদিন ওই ধর্না-অবস্থান চলবে।  গতকাল সেখানে র‌্যাফ ও দাঙ্গা প্রতিরোধকারী পুলিস বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। খুলে ফেলা হয় ‘সিএএ’ বিরোধী পোস্টারও। এর প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রুখে দাঁড়ান এলাকার প্রতিবাদী নারীরা।  

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সোনু ওয়ারসি রোববার রাতে বলেন, ‘মায়েরা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, এক পা-ও সরব না। এলাকার বাইরের নারীরাও তাঁদের সন্তান কোলে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তো গায়ের জোরে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে পারব না। মানুষের এই সম্মিলিত শক্তিই আমাদের একমাত্র জোর।’ দিল্লির শাহীনবাগে বিগত ২৪ দিন ধরে পুলিশি দমনপীড়ন ও সিএএ ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে একটানা আন্দোলন চলছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

  

 

ট্যাগ