‘সিএএ’ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত শাহীনবাগের আন্দোলনকারীরা অন্যত্র যেতে নারাজ
(last modified Wed, 19 Feb 2020 06:12:48 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০ ১২:১২ Asia/Dhaka
  • ‘সিএএ’ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত শাহীনবাগের আন্দোলনকারীরা অন্যত্র যেতে নারাজ

ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে দিল্লির শাহীনবাগের আন্দোলনকারীরা অন্যত্র যাবেন না বলে জানিয়েছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) বেসরকারি হিন্দি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আজতক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভরত নারীরা ধর্না-অবস্থানস্থল থেকে সরে যেতে অস্বীকার করেছেন।

শাহীনবাগের প্রতিবাদী এক নারী জানান, ‘যতক্ষণ না ‘সিএএ’-এর মতো ‘কালো আইন’ প্রত্যাহার না করা হবে ততক্ষণ আমরা এখান থেকে কোথাও যাব না। যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও আমরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে আসছি।’

গত (সোমবার) ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সড়ক অবরোধ না করে অন্যত্র প্রতিবাদ কর্মসূচির পক্ষে রায় দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে। 

এ প্রসঙ্গে হাপুরের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী আফসা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বলছে যে সড়ক বন্ধ করা আমাদের অধিকার নয় কিন্তু এখানে দু’মাস ধরে দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে এবং লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

আফসা বলেন, ‘সিএএ-কে অন্য সাধারণ আইনের সাথে তুলনা করা যায় না। এটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। সরকারের উচিত আমাদের সাথে কথা বলা। কিন্তু ওঁদের মধ্যে এত অহংকার আছে যে কেউ দেখা করতে প্রস্তুত নয়।’ ‘যতক্ষণ ওই আইন প্রত্যাহার না করা হবে, ততক্ষণ আমারা এখান থেকে সরবো না’ বলেও আফসা সাফ জানান।

দিল্লির আবু ফজলের বাসিন্দা শাহানা জানান, আমরা আমাদের বাড়িতে প্রতিদিনের কাজ শেষ করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আসি। আমরা প্রতিনিয়ত এখানে আসছি।

একজন প্রবীণ নারী বলেন, ‘আমরা এখানে সারাদিন বসে থাকি। আমরা সবাইকে বাড়িতে রেখে এখানে ধর্না-অবস্থানে বসে থাকি, এটা সমস্যা নয় কী?’

আন্দোলনকারী এক নারী বলেন, ‘আমরা অন্য কোথাও যাচ্ছি না। আমরা এদেশের নাগরিক। এখানে বসে থাকলেও সরকার আমাদের কথা শুনছে না। অন্য কোথাও গেলে কে আমাদের কথা শুনবে?’

তিনি বলেন, ‘ট্র্যাফিকের সমস্যাটি ছোট কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি তার চেয়ে বড়। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এখানে বসে আছি। ওই আইনটি কেবল মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যদি আমরা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারি তাহলে আমাদেরকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা হবে। সরকার যদি বলে আমরা ওই আইন কার্যকর করব না, তবেই আমরা এখান থেকে উঠে যাব।’

সড়ক খালি করার ইস্যুতে লক্ষ্মীনগরের এক প্রতিবাদী নারী বলেন, বিষয়টি স্থান নিয়ে নয়। সরকারী ওই আইন (সিএএ) বিপজ্জনক! সড়ক বন্ধ থাকা বড় ইস্যু নয়। আমাদেরও অনেক সমস্যা হচ্ছে, তবে বড় সমস্যা রোধ করতে ছোট ছোট সমস্যায় পড়তে হয়।’ সরকারের উচিত প্রতিবাদকারীদের যত্ন নেওয়া। এটি দেশকে বিভক্ত করার একটি আইন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে দিল্লির শাহীনবাগে বিগত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ধর্না-অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে। এ কারণে সেখানকার সড়ক বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছলে, আদালত গত (সোমবার) বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনার জন্য একটি প্যানেল গঠন করে দিয়েছে যাতে সিনিয়র আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে ও সাধনা রামচন্দ্রন রয়েছেন। তাঁদেরকে সাহায্য করবেন কেন্দ্রীয় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ।

শীর্ষ আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীরা খুব শিগগিরি শাহীনবাগের বিক্ষোভকারীদের সাথে সাক্ষাৎ করে সংশ্লিষ্ট সড়ক মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু প্রতিবাদকারীরা বলছেন, কোনও সরকারি প্রতিনিধি তাদের সাথে সাক্ষাৎ না করলে এবং ‘সিএএ’-এর মতো আইন প্রত্যাহার না করা হলে তারা এই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না।

সিএএ-এর বিরুদ্ধে বিগত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম নারীদের নেতৃত্বে দিল্লির শাহীনবাগে ধর্না-অবস্থান হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষজন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বন্ধ হয়ে থাকার কারণে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বিক্ষোভকারীদের অন্যত্র বিক্ষোভ করার কথা বলেছে। তাঁদের সঙ্গে সংলাপের জন্য সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতাকারীদের নিয়োগ করেছে। কিন্তু প্রতিবাদী নারীরা সাফ জানিয়েছেন, সিএএ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা এখান থেকে কোথাও যাবেন না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ