দিল্লি রণক্ষেত্র: পুলিশ কনস্টেবলসহ নিহত ১৩, আহত দেড়শতাধিক
(last modified Tue, 25 Feb 2020 05:18:02 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ ১১:১৮ Asia/Dhaka
  • দিল্লিতে সিএএ-বিরোধী একজনকে মারধর করছে সরকার সমর্থকরা।
    দিল্লিতে সিএএ-বিরোধী একজনকে মারধর করছে সরকার সমর্থকরা।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সহিংসতায় পুলিশের এক হেড কনস্টেবলসহ ১৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় ৭০ জন গুলিবিদ্ধসহ দেড়শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে ব্রহ্মপুরি ও মৌজপুর এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‍্যাফ) গোলযোগপূর্ণ এলাকায় ফ্ল্যাগমার্চ করেছে। অন্যদিকে, করোয়াল নগরে টায়ার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল (সোমবার) দিনভর এবং রাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে এবং বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল রতন লাল ও গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহাম্মাদ ফুরকান নামে এক বেসামরিক ব্যক্তির কথা জানা গেছে।

এসময় উভয়পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, এবং দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দিল্লির বিভিন্ন এলাকা। যার ফলে এদিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আধা সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামাতে হয় এবং গোলযোগপূর্ণ এলাকায় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

উত্তর-পূর্ব দিল্লি অঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফসহ মোট আট কোম্পানি জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই কোম্পানি র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‍্যাফ) ও এক কোম্পানি নারী নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান রয়েছে।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি

মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি সহিংসতার জন্য নাম না করে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে অভিযুক্ত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি লেখেন, ‘সাবেক বিধায়ক এবং এক বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক মন্তব্যই এদিনের দাঙ্গার জন্য দায়ী। এখন তো পুলিশের যুক্ত থাকার প্রমাণও স্পষ্ট। সাবেক ওই  বিধায়ককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। সহিংসতা রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে এটা আরও ছড়িয়ে পড়বে।’

গত (শনিবার) রাত থেকে ‘সিএএ’-এর প্রতিবাদে দিল্লির শাহীন বাগের আদলে বিক্ষোভ চলছে দিল্লির জাফরাবাদে। কয়েকশ’ মুসলিম নারী জড়ো হন সেখানে। তা নিয়ে রোববার পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের না হঠালে তাঁরাও পাল্টা রাস্তায় নামবেন বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার দুপুরে দিল্লির গোকুলপুরি, ভজনপুরা এলাকায় বিক্ষোভ হয়। এসময় ‘সিএএ’-এর সমর্থনে একদল মানুষ সেখানে এসে হাজির হয় বলে অভিযোগ।

গণমাধ্যমের বিভিন্ন  সূত্রে প্রকাশ, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে দিতে ‘সিএএ বিরোধী’ মিছিলের সামনে হাজির হয় ওই দলটি। এতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সড়কের উপরেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সীতারাম ইয়েচুরি

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এমপি, শাসক দলের নেতৃত্বের ঘৃণ্য বক্তব্য এবং ‘গোলি মারো’ বলে হিংসায় প্ররোচনার কারণেই দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলার এই পরিণতি আমরা দেখলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসময়ে শান্তি বজায় রাখা জরুরি। আমরা সকলের কাছে আবেদন করছি গুজবে কান দেবেন না। এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর বর্তায়, কারণ সরকার মানুষের ক্ষোভ নিরসনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

গতকাল সোমবার দিনভর সহিংসতার পরে রাতে দিল্লির উত্তর-পূর্ব জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অবস্থা ছিল ভীতিকর। এসময় তাণ্ডবকারীরা দোকানের শাটার ভেঙে জিনিসপত্র বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাতে এ ধরণের বহু ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।  হামলাকারীরা গণমাধ্যম তো দূরের কথা, এমনকি সাধারণ ব্যক্তিকেও মোবাইল থেকে কোনও কিছু রেকর্ড করতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, তারা আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ, ভজনপুরা, করওয়াল নগর, জোহরপুর প্রভৃতি স্থানে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ সময় দুর্বৃত্তরা বেশকিছু যানবাহন লাঠিডাণ্ডা নিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

গণমাধ্যমের একটি সূত্র বলছে, রোববার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সহিংসতার জেরে জাফরাবাদ অঞ্চলের বহু মুসলিম পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে মহল্লা ছেড়েছেন। জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, সিলমপুরের অনেকে বাড়ির সামনে ‘গেরুয়া পতাকা’ ঝুলিয়ে দিয়েছেন, যাতে হামলা না হয়।

আজ (মঙ্গলবার) এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেছেন, ২/৩ মাস ধরে সিএএ, এনআরসি ইস্যুতে বিক্ষোভ হচ্ছে, সহিংসতা হচ্ছে, এজন্য সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা কেন্দ্রীয় সরকারের। সরকার পক্ষের লোকেরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, গুলি মারার কথা বলছেন। কপিল মিশ্র (বিজেপি নেতা) বলেন, ট্রাম্পের ছাড়ার পরে এ নিয়ে নিষ্পত্তি হবে। গণতন্ত্রে এভাবে সরকার কাজ করে না।#

পার্সটুডে /এমএএইচ/এমবিএ/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ