‘সিএএ’ নিয়ে কোনও বিপদ নেই!’ : মোহন ভাগবত, ‘আমরা শিশু নই!’ : ওয়াইসি 
(last modified Sun, 25 Oct 2020 15:38:38 GMT )
অক্টোবর ২৫, ২০২০ ২১:৩৮ Asia/Dhaka
  • ‘সিএএ’ নিয়ে কোনও বিপদ নেই!’ : মোহন ভাগবত, ‘আমরা শিশু নই!’ : ওয়াইসি 

ভারতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সম্পর্কে বলেছেন, এই আইনে কোনও বিপদ নেই। দেশে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আজ (রোববার) এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ওই মন্তব্য করেন।

তাঁদের জনসংখ্যা কমাতেই ওই আইন, এমন রটনা করে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হেনস্থার হাত থেকে রক্ষা করতে ওই আইন হয়েছে। তারা এ দেশে এলে যাতে নাগরিকত্বের অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সে কথা মাথায় রেখেই ওই আইন করা হয়েছে।’ 

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের পাল্টা জবাবে ভারতের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি  বলেছেন, ‘আমরা শিশু নই যে কেউ আমাদের বিভ্রান্ত করবে। বিজেপি এটা বলতে পারেনি যে একসঙ্গে সিএএ-এনআরসির (সংশোধিত নাগরিক আইন-জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) উদ্দেশ্য কী? যদি এটি কেবল মুসলিমদের জন্য না হয় তাহলে সমস্ত আইন থেকে ধর্ম শব্দ সরিয়ে দিক।  

ওয়াইসি বলেন, ‘জেনে রাখুন যতক্ষণ ওই আইনে আমাদের নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করার কোনও বিষয় থাকবে ততক্ষণ আমরা বার বার প্রদর্শন করতে থাকব। আমরা এই জাতীয় সমস্ত আইনের বিরোধিতা করব, যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণের নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ 

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মাতীন আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতীয় সংবিধানে যে মৌলিক কাঠামো রয়েছে তাতে ১৪ ও ১৫ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে কোনও প্রকার বৈষম্য হবে না। কিন্তু সিএএ বা এনআরসি প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে এখানে একটা ধর্মকেন্দ্রিক বৈষম্য রয়েছে।

দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয় রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতকে প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে হয়। কিন্তু কীভাবে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মিয়ানমার মিসিং হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রতিবেশিদের আমরা জায়গা দিতে চাই তাহলে অবশ্যই তা ভালো। তাহলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা হচ্ছে কেন? যে ক্রোনোলজির কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে থাকেন যে ক্রোনোলজিটা বুঝুন, সেই ক্রোনোলজিতে মূলত বোঝা যাচ্ছে যে এই ধরণের আইন কেবল সংবিধান বিরোধী তা নয়, তার সাথে সাথে ভারতের যে ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক দিক আছে যে সকলের জন্য সমান অধিকার, সমান জায়গা দেওয়া সেটা  প্রতিবেশি কোনও রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম বা জাতির নির্যাতিতদের বিষয়ে  হোক, এক্ষেত্রে সবার জন্য অধিকার থাকা উচিত। এখানে কোনোপ্রকার বৈষম্য থাকা উচিত নয়। এটা নিয়ে সংসদে আবার বিতর্ক হোক। একটা পূর্ণাঙ্গ বিতর্ক হোক। নাগরিকত্ব ইস্যুতে সংসদের প্রত্যেকের রায় নেওয়া হোক, সাধারণ মানুষের রায় চাওয়া হোক। আসলে আমার মনে হয় সিএএ বিপথে চালিত হয়েছে এবং এটা সংবিধানের মূল্যবোধের বিরোধী।’
আব্দুল মাতীন

অন্যদিকে, বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বিহারে এক নির্বাচনী সমাবেশে ‘সিএএ-এনআরসি’ ইস্যুতে কংগ্রেস এবং আরজেডি’র  সমালোচনা করে ওয়াইসি  বলেন,  ‘আমার কংগ্রেস, আরজেডি এবং অন্যদের এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, ‘সিএএ’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময়ে লোকেরা আপনার নীরবতা ভুলে যাবে না। বিজেপি নেতারা যখন বিহারের সীমান্ত অঞ্চলের জনগণকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন,  তখন আরজেডি এবং কংগ্রেস মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। তারা ওই বিষয়ে কিছুই বলেনি।’

ওয়াইসি বলেন, ‘এনআরসি’ এবং ‘সিএএ’ কেবল মুসলিম ও দলিতদের জন্য মাথাব্যথা নয়,  বরং ৫০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর উদাহরণ হল অসম। এখানে, ২০ লাখ মানুষ এনআরসি’র বাইরে রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র পাঁচ লাখ মুসলিম রয়েছেন। যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা ১৫ লাখ। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে এসব বিষয়ের পরিবর্তে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। #

 

পার্সটুডে/এমএএইচ/আমির/ বাবুল আখতার/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ