অসমে ‘এনআরসি’র নথিপত্র ফের যাচাইয়ের আবেদনে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া
ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নথিপত্র ফের যাচাইয়ের আবেদনে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সীমান্তবর্তী জেলায় ২০ শতাংশ এবং অন্যত্র ১০ শতাংশ নাগরিকের নথিপত্র ফের যাচাই করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরেই এনআরসি স্টেট কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেব গোস্বামী শীর্ষ আদালতে এনআরসি পুনঃপরীক্ষার আবেদন জানিয়েছেন।
ওই ঘটনায় বাংলাভাষীদের সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, বাঙালিদের সন্দেহের নজরে রেখেই ‘এনআরসি’র নিয়মনীতি তৈরি এবং সংশোধন-সংযোজন হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের নয়া সিদ্ধান্তে তাঁদের নাগরিকত্বকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলা হচ্ছে।
অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, দীর্ঘদিন এ রাজ্যে থাকা সত্ত্বেও ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। 'ডি' ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প এবং এনআরসি তালিকা তৈরির নামে সীমাহীন যন্ত্রণায় রয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে অতীতের সরকারগুলো চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার প্রতি তাঁর অনুরোধ, প্রত্যেক ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষার মর্যাদা ও সাংবিধানিক অধিকার যেন অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টও নতুন করে এনআরসির নথি পরীক্ষা না করার আবেদন জানিয়েছে। ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, ‘বিগত সরকারের মেয়াদের অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়েছে ‘এনআরসি’ নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে। সরকারি কোষাগার থেকে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, চরম মানসিক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। এখন আবার স্টেট কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেব গোস্বামীর সিদ্ধান্তে প্রান্তিক মানুষদের দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হবে৷’
এ প্রসঙ্গে আজ (মঙ্গলবার) অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আমসু) সাবেক সভাপতি ও ‘রাইজর’ দলের নেতা আজিজুর রহমান রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কাজ চলছিল। এবং সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল, মানুষের একবার দুইবার নয় তিনবার, চারবার, পাঁচবার নথিপত্র যাচাইয়ের পর জাতীয় নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ হয়েছে। এখন স্টেট কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেব গোস্বামী তাঁর কার্যকালের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এনআরসির কাজের গতি বাড়াতে পারেননি। আচমকা উনি সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। এটা উনি এনআরসিকে বুমেরাং করার চেষ্টা করছেন। জনগণ আগে যে নথিপত্র দেখিয়েছে, আবার রি-ভেরিফিকেশন হলে সেই নথিই তো দেখাবেন। আমরাও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। আমরা মনে করি সুপ্রিম কোর্ট রি-ভেরিফিকেশনের আবেদন গ্রাহ্য হবে না বলেও (আমসু) সাবেক সভাপতি ও ‘রাইজর’ দলের নেতা আজিজুর রহমান মন্তব্য করেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।