গুজরাটে কার্যকর হচ্ছে ‘লাভ জিহাদ’ আইন, বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া
(last modified Sat, 05 Jun 2021 12:03:22 GMT )
জুন ০৫, ২০২১ ১৮:০৩ Asia/Dhaka
  • গুজরাটে কার্যকর হচ্ছে ‘লাভ জিহাদ’ আইন, বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া

ভারতের বিজেপিশাসিত গুজরাটে ১৫ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে কথিত ‘লাভ জিহাদ’ আইন। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখান থেকে গুজরাটে যারা 'জোর করে' ধর্মান্তরিত করবে এবং প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজ্যে এই আইন প্রয়োগের নেপথ্যে উদ্দেশ্য হ'ল- কোনও প্রলোভন, জবরদস্তি বা কোনও ধরণের সহিংসতায ঘটিয়ে যাতে কেউ কারও ধর্মান্তর না করতে পারে। গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত লাভ জিহাদের আইনকে অনুমোদন দিয়েছেন।  

দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ বছর জেল  

'লাভ জিহাদ' আইনের আওতায় প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রসঙ্গত, গুজরাট বিধানসভায় ব্যাপক গোলযোগের মধ্যে লাভ জিহাদ বিলটি পাস হয়েছিল। গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদীপ জাদেজা বলেছিলেন, যারা তিলক লাগিয়ে হাতে তাগা বেঁধে হিন্দু বা অন্য ধর্মের মেয়েকে ঠকায়, প্রতারণা করে, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না।     

যারা আইন অমান্য করবে তাদের শাস্তি হবে    

লাভ জিহাদ আইন অনুযায়ী- ধর্ম গোপন করে যারা বিয়ে করবে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে, ধর্মকে আড়াল করে রেখে নাবালিকাকে বিয়ে করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইসঙ্গে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। 

বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. সাইফুল্লাহ আজ (শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভালোবাসা হল মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি। সেই প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত আছে এবং হয়তো সৃষ্টি যতদিন থাকবে ততদিন এর কোনও ব্যতিক্রম থাকবে না। কিন্তু কে কাকে ভালোবাসবে, কখন ভালোবাসবে, কীভাবে ভালোবাসবে সেটা প্রথাগত রীতিনীতি, নিয়ম ইত্যাদির ধার ধারে  না। মানুষের এই চিরন্তন প্রবৃত্তিকে আমরা আইনের বলে বাধার চেষ্টা করছি। এটা প্রথমত আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে হচ্ছে। কেন এই আইন? কেন এরকম করে ভাবতে হচ্ছে? আসলে ইসলামের ইতিহাস এবং অনৈসলামিক যে সংস্কৃতি তার যদি তুলনামূলক পাঠ নেওয়া যায় বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে অনেক ক্ষেত্রে অমুসলিম মেয়েরা মুসলিম ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু কী কারণে হয় তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আমার পক্ষ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমার একটা জিনিস মনে হয়েছে যে প্রেম, দাম্পত্য এ সমস্ত প্রশ্নে ইসলামের মধ্যে শৃঙ্খলা আছে সেই শৃঙ্খলা অন্যদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে এটা আমরা আরও বেশি করে দেখেছি।’ 

ড. সাইফুল্লাহ আরও বলেন, ‘আইন দিয়ে সব সময় সত্যকে ছোঁয়া যায় না। আইন একটা পদ্ধতি মাত্র। কিন্তু সেই পদ্ধতির বাইরেও একটা অন্য যে সত্য রয়েছে, মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এগুলোর উপরেই আমাদের বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। জেল জরিমানার আইন করা হলেও কেউ যদি কাউকে ভালোবাসবে বলে মনে করে তাহলে একমাত্র তার পারিবারিক মূল্যবোধ, তার ব্যক্তি মূল্যবোধই তাঁকে সেই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। কোনও আইনের বলে আমরা সেখান থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবো না। কাজেই আমি এ ধরণের আইনের বিরোধিতা করি।’   

বিশ্লেষকদের মতে, কথিত 'লাভ জিহাদ' হ'ল- একটি ‘কল্পিত শব্দ’ যা ডানপন্থী শক্তি দ্বারা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুকরণের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি- মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মহিলাদেরকে ব্যয়বহুল মোবাইল ফোন, অত্যাধুনিক গাড়ি এবং অর্থের প্রলোভন দিয়ে তাদের জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করে, যা আন্তর্জাতিক 'জিহাদি' সংগঠনগুলো সরবরাহ করে। মুসলিম পুরুষরা জোর করে হিন্দু মহিলাদের ধর্মান্তর করার পরে মানসিক ও শারীরিকভাবে তাদের শোষণ করে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও রাজ্যের মেশিনারি এ ধরণের কোনও প্রমাণ খুঁজে পায়নি যার ফলে এটা প্রমাণ হয় যে কথিত ‘লাভ জিহাদ’ বলে কিছু আছে।#            

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।