উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে ১০০ আসনে প্রার্থী দেবে ‘মিম’, বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া
ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একশো আসনে প্রার্থী দেবে ‘মজলিশ-ই- ইত্তেহাদুল-মুসলেমিন’(মিম)। দলটির পক্ষ থেকে মিমের অন্যতম প্রধান নেতা ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিধায়ক আকবর উদ্দিন ওয়াইসি এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় ‘মিম উত্তর প্রদেশে ১০০ বিধানসভা আসনে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তর প্রদেশ আমরা আসছি’বলে জানিয়েছেন।
রাজ্যের মুসলিম জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে তারা প্রার্থী দেবে। এরমধ্যে রাজ্যের পশ্চিম, মধ্য ও পূর্বপ্রান্তের একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। দলটির রাজ্য সভাপতি শওকত আলী বলেন, আমরা ভালো প্রার্থীকেই টিকিট দেবো। এক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়কে কোনও প্রাধান্য দেওয়া হবে না।
২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছিল ‘মিম’। কিন্তু, কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি তারা। ভোট পেয়েছিল মাত্র ০.২ শতাংশ। কিন্তু, গতবছর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আশাতীত ফল করেছিল ওয়াইসির দল। মাত্র ২০ আসনে নির্বাচনে লড়ে তারা ৫ আসনে জয়ী হয়েছিল। তাকে সম্বল করেই এবার হিন্দুত্ববাদী বিজেপির পোস্টার বয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ঝাঁপাতে চলেছে ‘মিম’।
এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, উত্তর প্রদেশে মোট ৪০৩ আসনের মধ্যে ১৪৩ আসনে সরাসরি মুসলিমদের প্রভাব রয়েছে।১০৭ আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররা ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে।৭০ টি আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।৭৩ টি আসনে মুসলিম জনসংখ্যার হার ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি।
এ প্রসঙ্গে আজ (সোমবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক আব্দুল মাতিন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতবর্ষের রাজনীতিতে আমরা লক্ষ্য করছি যে, একটা নতুন দিক তৈরি হচ্ছে। সেই দিকটা হচ্ছে ভারতবর্ষের রাজনীতি দুটি ক্যাম্পে বিভক্ত হয়ে যাওয়া। একদিকে দেখা যায় তথাকথিত বিজেপি বিরোধী শক্তি যাকে অনেকসময়ে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ জোট। অন্যদিকে, এনডিএ বা বিজেপি শক্তি। খুব মজার বিষয় হচ্ছে এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ জোটে যাদেরকে ভয় দেখিয়ে এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বিভিন্ন দল বিজেপি’র বিরুদ্ধে ‘ভোট ব্যাঙ্ক’তৈরি করে রেখেছে, তাদেরকে এই জোটে নেওয়া এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো বিরত থাকে। আমরা লক্ষ্য করেছি বিহারেও সেটা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করছি যে, সেটা উত্তর প্রদেশেও কমবেশি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যাচ্ছে একধরণের দলিত, আদিবাসী এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের যেসব দল আছে, তাদেরকে সবসময়ে দেখানোর প্রচেষ্টা হয় যে এসব দল হচ্ছে সাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নয়।’
তিনি বলেন, ‘রজনীতিতে এই যে একটা উচ্চবর্ণের দাপট চলছে, এরফলে একদিকে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মধ্যে একধরণের সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন দল যারা দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের বাদ দিতে চায়, সেই প্রবণতা বাড়ছে। আমার মনে হয় ভারতবর্ষের সংবিধানই হবে ভারতবর্ষের আগামীদিনের চলার মাপকাঠি। ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে অধিকার দিয়েছে ভারতবর্ষের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। কে জিতবে কে হারবে, কাকে সরাতে গেলে কী হবে সেটার দিকে যদি আপনি লক্ষ্য করেন তাহলে ব্ল্যাক যেভাবে আমেরিকাতে, সেভাবে ভারতবর্ষের দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা তারা কোনও দিনও রাজনৈতিক এমপাওয়ারমেন্ট অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তারা কোনোদিন এগোতে পারবে না। সেজন্য আমার মনে হয়, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত, তাতে গণতন্ত্রের মর্যাদা বাড়ে, গণতন্ত্রের অংশীদারিত্বের প্রশ্নে জোর করে সওয়াল করতে পারে। একে রুখতে গেলে ওকে, ওকে রুখতে গেলে তাকে, সবসময় কী দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুরা কী কাউকে রোখার জন্য তৈরি হয়ে থাকবে? না, তারাও রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ পেতে চাইবে? সেজন্য আমার ব্যক্তিগত মত হল, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অধিকার রয়েছে, যেমন শিবসেনার অধিকার আছে, বিজেপির অধিকার আছে, তৃণমূলের অধিকার আছে, সিপিএমের অধিকার আছে, তেমন ‘মিম’(মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলেমিন)-এর অধিকার আছে, আইএসএফের (ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট) অধিকার আছে, তেমন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অধিকার আছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।’
‘কাউকে যদি জোটে না রাখা হয়, তাদেরকে যদি বাদ দেওয়া হয়, তাদেরকে যদি দাগিয়ে দেওয়া হয়, এই দাগিয়ে দেওয়ার রাজনীতিটাই হচ্ছে উচ্চবর্ণের রাজনীতি। এই দাগিয়ে দেওয়ার রাজনীতির নামটাই হচ্ছে সংখ্যালঘু-দলিত-আদিবাসীদেরকে বঞ্চিত করার রাজনীতি’বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আব্দুল মাতিন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।