স্বাগত জানিয়েছেন অমরিন্দর সিং
সীমান্তে বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তীব্র বিতর্ক: ক্ষুব্ধ কংগ্রেস-তৃণমূল-অকালি দল
ভারতে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পাঞ্জাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ওই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস ও অন্যদের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, এ বার থেকে পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং পাঞ্জাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ গ্রেফতার, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার কাজ করতে পারবে।
সম্প্রতি পাকিস্তান সংলগ্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোনের সাহায্যে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চান্নি নয়া নির্দেশিকায় আপত্তি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত (ভারত-পাকিস্তান/ ভারত-বাংলাদেশ) থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফকে এই বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আগে এই সীমা ছিল ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চান্নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল কাঠামোর ওপর সরাসরি আক্রমণ। বিএসএফকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করছি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিন।’
পাঞ্জাবের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুখজিন্দর সিং রন্ধাওয়াও ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি না সরকারের মনে কী রয়েছে। এটা আমাদের অধিকারের ওপর আক্রমণ।’ রন্ধাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন।
পাঞ্জাব কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সুনীল জাখর বলেছেন, পাঞ্জাবের ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিএসএফের আওতায় এসেছে। এরফলে পাঞ্জাব পুলিশকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
শিরোমণি অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল ওই সিদ্ধান্তের পেছনে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যোগসাজশের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের পক্ষে রাজ্যের সম্মতি ছাড়া এতবড় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং অবশ্য ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে না আনার কথা বলেছেন। তাঁর মিডিয়া উপদেষ্টা রভীন ঠুকরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাপ্টেনের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, 'আমাদের সেনারা কাশ্মীরে শহীদ হচ্ছে। আমরা দেখছি পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসীরা পাঞ্জাবে অস্ত্র ও মাদক পাঠাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএসএফের উপস্থিতি এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি আমাদের শক্তিশালী করবে।
আজ (বৃহস্পতিবার) কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৯ জুন গুজরাটের আদানি বন্দর দিয়ে ২৫,০০০ কেজি হেরোইন এসেছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর গুজরাটের আদানি বন্দরে ৩০০০ কেজি হেরোইন ধরা পড়েছিল। পাঞ্জাবে বিএসএফের এখতিয়ার ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। ফেডারেলিজম মৃত, ষড়যন্ত্র স্পষ্ট।’
পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরে আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। মোদি সরকার ফেডারেল কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। ১৫ কিলোমিটার এলাকা ছিল অনেক। কিন্তু মোদি সরকার একে বাড়িয়ে সবকিছু দখল করতে চাছে বলেও পরিবহণমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।