এই প্রথম স্বীকারোক্তি: 'ইয়েমেন যুদ্ধ ছিল অযথা এবং সৌদি জোট পরাজিত হয়েছে'
(last modified Wed, 01 Dec 2021 14:01:33 GMT )
ডিসেম্বর ০১, ২০২১ ২০:০১ Asia/Dhaka

ইয়েমেনের পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান আহমাদ আবিদ বিন দাগার এবং তার সহকারী আব্দুল আজিজ যাবারি এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রথম স্বীকার করেছেন ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের আগ্রাসন ছিল অযথা। বিবৃতিতে তারা এ কথাও স্বীকার করেছেন ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় সৌদি জোট চরমভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই সামরিক পন্থা অবলম্বনের আর কোনো মানে হয় না বরং এ কৌশল অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি সরকারের ঘনিষ্ঠ এ কর্মকর্তারা এমন সময় এ বক্তব্য দিলেন যখন মানসুর হাদিকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট গত প্রায় সাত বছর ধরে ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং দরিদ্র এ দেশটির বিরুদ্ধে সৌদি, ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

মানসুর হাদির উপদেষ্টা পরিষদের প্রধানের এ স্বীকারোক্তির সঙ্গে লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জর্জ কোরদাহির বক্তব্য মিলে যায়। তিনিও একই বক্তব্য দেয়ায় সৌদি আরবের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কোরদাহি সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটের সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ইয়েমেনে এখন সৌদি আগ্রাসন বন্ধ করার সময় এসেছে। ইয়েমেন যুদ্ধকে তিনি 'বাজে যুদ্ধ' বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং বলেছিলেন আরব দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধকে তিনি সমর্থন করেন না। তিনি আরো বলেছিলেন যে, ইয়েমেনে সামরিক বাহিনী এবং হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের যোদ্ধারা বাইরের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করছেন।

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০১৫ সালের ২৬  মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে এবং ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়ে সাত বছর হতে চললো। গত ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধে ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের অনুগত স্বেচ্ছাসেবী ও সেনাবাহিনী বহু গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করেছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের সমালোচনার পর সৌদি সমর্থক সাবেক মানসুর হাদি সরকারের ঘনিষ্ঠ এ দুই কর্মকর্তা পরাজয়ের কথা স্বীকার করলেন যা কিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব, ইয়েমেন বিষয়ক এ সংস্থার বিশেষ দূত এবং এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আগ্রাসনকে অনর্থক বলে অভিহিত করেছেন। এ অবস্থায় সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে লেবাননের তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করলেও মানসুর হাদির উপদেষ্টাদের এ বক্তব্যের ব্যাপারে কেন রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে সেটাই  এখন প্রশ্ন।

এ প্রশ্নের জবাবে অনেকে মনে করেন ইয়েমেন ইস্যুতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের সমালোচনার জবাব দেয়ার ক্ষমতা সৌদি আরবের নেই। কিন্তু লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জর্জ কোরদাহিকে সমালোচনার কারণ ছিল তিনি হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে বলেছিলেন, হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো যেমন ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ যোদ্ধারাও সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

যাইহোক, পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি সরকারের দুজন উপদেষ্টা অনেক দেরিতে হলেও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি শত্রুতার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন এবং এ কথা স্বীকার করেছেন যে ইয়েমেন যুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল তা থেকে সৌদি আরব সরে গেছে। #  

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।