ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অগ্রযাত্রার ৪৪ বছর পূর্তি ও নানা সাফল্যের মূল রহস্য!
(last modified Sat, 11 Feb 2023 08:12:39 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ১৪:১২ Asia/Dhaka

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে আজ পালন করা হচ্ছে কিংবদন্তীতুল্য ইসলামী বিপ্লবের ৪৪ তম বিজয়-বার্ষিকী।

গৌরবময় ৪৪ বছর পেরিয়ে হাজার বছরের সেরা ইরানের ইসলামী বিপ্লব এখন প্রবেশ করল ৪৫তম বছরে। সমগ্র ইরানে আজ নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ কেউই ঘরে বসে নেই। ইরানের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও বন্দরে এ মহান বিজয়-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় শরিক হয়েছেন সর্বস্তরের লাখো কোটি জনগণ। প্রধান সড়ক ও চত্ত্বরগুলোয় জেগেছে যেন জনসমুদ্রের জোয়ার। অনেকেরই ধারণা এবার ইসলামী বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া ইরানি জনগণের সংখ্যা এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। 

আধুনিক যুগে রাজনীতিসহ জীবনের প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে ধর্ম ও এমনকি ইসলামকে নিয়েও যখন ব্যাপক হতাশা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল তখনই ইরানে সফল হয় ইসলামী বিপ্লব ও গড়ে তোলা হয় আধুনিক যুগের প্রথম ও একমাত্র খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্র। খাঁটি ইসলাম সব ধরনের জুলুম, অবিচার, বৈষম্য, লুণ্ঠন, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও খোদাদ্রোহিতার বিরোধিতা করে। তাই এ বিপ্লবের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আকর্ষণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী ইরান আজ অত্যন্ত প্রভাবশালী এক শক্তি যে শক্তি বিশ্বের রাজনৈতিক গতিধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক ও ফিলিস্তিনেও বড় ধরনের পরিবর্তন ইরানের ইসলামী বিপ্লবেরই অন্যতম প্রধান সুফল। 

ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত না হলে দেশটির ওপর মার্কিন সরকারের প্রভুসুলভ কর্তৃত্ব তথা দেশটির সরকার ও জনগণের সেবাদাসত্বের কলঙ্ক এখনও অব্যাহত থাকত এবং শাহের নির্মম স্বৈরশাসনও অব্যাহত থাকত! অন্যদিকে বিশ্বের নানা অঞ্চলে ইসলামী জাগরণও এতটা বেগবান হতে পারত না। খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামই এইসব সাফল্যের মূল রহস্য।  

মরহুম ইমাম খোমেনির পর ইসলামী ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনিও বিপ্লবের নানা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছেন। 

সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রকৃত প্রতিরোধ ও আসল স্বাধীনতা কাকে বলে তা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে এই মহাবিপ্লব। খাঁটি ইসলাম ও জাতীয় গৌরবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ইরানি জাতি গত ৪৪ বছরে শত্রুদের বহু ষড়যন্ত্র বানচাল করেছে ইস্পাত-কঠিন জাতীয় ঐক্যের সুবাদে। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ, সন্ত্রাস ও প্রচার যুদ্ধসহ সাম্প্রতিক বহুমুখি যুদ্ধ কোনোটিই দুর্বল করতে পারেনি বিপ্লবী ও ইসলামী ইরানকে। বরং বাধা যত কঠিন ও বেশি হয়েছে ততই নানা ক্ষেত্রে এগিয়েছে এই বিপ্লব এবং নানা ক্ষেত্রে বেড়েছে সংগ্রামী এই জাতির যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস ও শক্তিমত্তা। 

দাম্ভিক শক্তিগুলোর সব ধরনের অবৈধ দাবি ও স্বার্থকে উপেক্ষা এবং জালিম শক্তিগুলোর বিরোধিতায় ঐতিহ্য সৃষ্টি করে গোটা বিশ্বের জুলুমবাজদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লব। তাই এ মহাবিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকী আজ ইরানি জাতি ছাড়াও সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের সব মহাদেশের মুক্তিকামী জাতিগুলোর অন্যতম প্রধান উৎসবে পরিণত হয়েছে।

আধিপত্যবাদের প্রধান শত্রু ইসলামী ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি শত্রুতায় নেমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো দিনকে দিন হয়েছে দুর্বল থেকে দুর্বলতর। অন্যদিকে দিনকে দিন বেড়েছে বিপ্লবী ইরানি জাতি ও তার সহযোগীদের সম্মান। অজস্র নিষেধাজ্ঞা ও বাধা সত্ত্বেও  ইসলামী ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়েছে চোখ ধাঁধানো। বৈজ্ঞানিক গবেষণা-কর্ম, আবিস্কার ও উদ্ভাবনের  প্রবৃদ্ধিতে ইরান এখন রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে।  স্টেমসেল বা মৌলিক কোষের প্রবৃদ্ধি, পরমাণু জ্বালানী, পারমাণবিক ওষুধ, ন্যানো প্রযুক্তি এবং মহাশূন্য গবেষণা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ-স্থানীয় পর্যায়ে উঠে এসেছে ইসলামী ইরান। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিসহ সামরিক খাতের নানা শাখায় ইসলামী ইরান এখন বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি শক্তির অন্যতম। 

ইসলামী ইরানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি এত উন্নত যে তা শত্রুদেরও স্বীকৃতি বা প্রশংসা অর্জন করছে। ইরান যে আজ সব ক্ষেত্রেই অগ্রসর ও উন্নত হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের মূল্যবোধকে সাথে নিয়ে তাও স্বীকার করছেন বিশ্বের নামকরা   বিশ্লেষকরা। 

এটা স্পষ্ট মহাসত্যের বাস্তবতাগুলোকে চিরকাল ঢেকে রাখা যায় না। আধুনিক যুগে কথিত ধর্মহীন সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আর পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও শোষণের নাগপাশে বন্দি কথিত লিবারেল গণতন্ত্রের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে জনগণের অংশগ্রহণ-ভিত্তিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থার আবির্ভাব বিশ্ব-ইতিহাসে এনেছে এক বড় যুগান্তর। ইসলামী রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে মডেল ইরান বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে তার জুলুম-বিরোধী কার্যকর শক্তিমত্তা, স্বাধীনতা, অদম্যতা ও দুর্বার অগ্রযাত্রা এবং অপরাজেয় নানা শক্তি এই ব্যবস্থাকে অদূর ভবিষ্যতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেলে পরিণত করতে পারে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবে গত কয়েক দশকে নানা অঞ্চলে ইসলামী জাগরণ ও মুক্তিকামী প্রতিরোধ জোরদারের বিষয়টিও এরই আলোকে সুস্পষ্ট। ইসলামী ইরান যে আজ এক বড় বিশ্ব-শক্তি তাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক ও গবেষকরা।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১১


 

ট্যাগ