রায়িসির ইন্দোনেশিয়া সফর: তেহরান-জাকার্তার মধ্যের সম্পর্কোন্নয়নে নয়া দিগন্তের উন্মোচন
(last modified Wed, 24 May 2023 11:57:25 GMT )
মে ২৪, ২০২৩ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka
  • রায়িসির ইন্দোনেশিয়া সফর: তেহরান-জাকার্তার মধ্যের সম্পর্কোন্নয়নে নয়া দিগন্তের উন্মোচন

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি গত সোমবার সন্ধ্যায় তার ইন্দোনেশিয়ার সমকক্ষ জোকো উইদোদোর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে জাকার্তা সফর করেন।

রায়িসির ইন্দোনেশিয়া সফর বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত রায়িসির এ সফর ২০০৬ সালের পর ইরানের প্রেসিডেন্টদের প্রথম সরকারি ও এক পাক্ষিক সফর। গত ১৭ বছর ইরানের প্রেসিডেন্টরা ইন্দোনেশিয়া সফর করেছিলেন। তবে এসব সফর ছিল কোনো আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য। ইন্দোনেশিয়ায় এ বিশেষ সফর ইরানের বৈদেশিক নীতির ভারসাম্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যা প্রতিবেশী, আঞ্চলিক এবং মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের ভিত্তিতে অনুসরণ করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের ইন্দোনেশিয়া সফরের অর্থ হল প্রাচ্যের সাথে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্পর্ক ও যোগাযোগ কেবল চীন এবং রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া অন্তর্ভুক্ত যেটি প্রায় ২৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি শক্তিশালী মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। 

ইন্দোনেশিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্টের সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এই সত্যের সাথে সম্পর্কিত যে এই সফর পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশলের ব্যর্থতা দেখা  হচ্ছে।। প্রকৃতপক্ষে এই সফর ইরানের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সম্পর্কে পশ্চিমাদের মিথ্যা ধারণা প্রমাণিত হয়েছে। 

নিঃসন্দেহে রায়িসির ইন্দোনেশিয়া সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত। ইন্দোনেশিয়া জি-২০ গ্রুপের সদস্য এবং বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে ইন্দোনেশিয়াকে গণ্য করা হয়। এই দেশটি গত দুই দশকে প্রায় ৫ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অনুমান করেছে যে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। 

যদিও ইন্দোনেশিয়ায় ২২ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে তবেদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তেলের রাজস্বের উপর ভিত্তি করে নয়।ইন্দোনেশিয়া হল কয়েকটি মুসলিম দেশের মধ্যে একটি যাদের শিল্প ও বৈজ্ঞানিক রপ্তানি রয়েছে। বর্তমানে জাকার্তা শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী নয় অনেক নতুন প্রযুক্তির কেন্দ্রও। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বিপুল অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং গত চার বছরে  তারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ১৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইন্দোনেশিয়ার বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সক্ষমতা প্রয়োজন এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানির জন্য ইরান একটি ভাল বাজার হতে পারে।

একই সময়ে পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চিকিৎসা ও ওষুধ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরান স্থানীয় সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং ইন্দোনেশিয়ার বৃহৎ বাজার এসব পণ্যের ভালো ক্রেতা হতে পারে। কার্পেট, পেস্তা, খেজুর, জাফরান, হস্তশিল্প এবং ভেষজ ঔষধী ইন্দোনেশিয়ার বাজারে ইরানের অন্যান্য রপ্তানি যোগ্য পণ্য হতে পারে। 

পরিশেষে দুই দেশের উল্লিখিত সক্ষমতা বিবেচনা করে এবং সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশের কর্মকর্তাদের আন্তরিক ইচ্ছার কথা বিবেচনা করে এটা প্রত্যাশা করা যাচ্ছে যে ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্ট রায়িসির সফরের প্রধান অর্জন হবে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রসার  এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো।# 

পার্সটুডে/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ