এপ্রিল ০৮, ২০২৪ ১৮:২৭ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর বৈঠক; 'সমস্যা সমাধানের পেছনে ছুটতে হবে'

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সঙ্গে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে তাদের আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছেন।

সর্বোচ্চ নেতার ভাষণ শুরুর আগে ছাত্র প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেছেন। তারা ইরান ও বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন। কোনো কোনো ইস্যুতে সমালোচনাও করেছেন এসব ছাত্র-ছাত্রী। প্রতি বছর রমজান মাসে সর্বোচ্চ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এমন আয়োজন করে থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কথা শোনার পর সর্বোচ্চ নেতা নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রথমেই তিনি রমজান মাস সম্পর্কে কথা বলেন।

তিনি বলেন, রমজান মাস থেকে অর্জিত পবিত্রতা ও দীপ্তি রক্ষার প্রধান উপায় হলো গোনাহ (পাপ) থেকে নিজেকে দূরে রাখা। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন, অনেক পাপ কাজ আছে যেটাকে অনেকে পাপ কাজ বলে মনেই করে না। আমরা ভার্চুয়াল জগতে এমন সব কথা বলি, এমন সব বক্তব্য রাখি যেগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের অসদাচরণকে যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি তাহলে তাতে সংশোধন আনা সম্ভব, তওবা-ইস্তিগফার করা সম্ভব। কিন্তু বেঠিক কাজগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে মানুষ তখন আর সে বিষয়ে তওবা করে না এবং ক্রমেই এ ধরণের বিষয়গুলো জমা হতে থাকে ও হৃদয়-মন তার দীপ্তি হারায়। আমার উপদেশ হল আপনি যা বলবেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন, ভেবে কথা বলুন। আপনার এমন কোনো কথা বলা বা বক্তব্য দেওয়া উচিৎ নয় কিংবা এমন কিছু লেখা বা এমন কোনো কাজ করা উচিৎ নয় যেগুলোর জবাব পরবর্তীতে দিতে পারবেন না। আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে।

সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা যে, এবারের রমজান মাসটি ভালো সময় ছিল, বিশেষ করে কুরআনের প্রসার ও কুরআন তেলাওয়াত আমার জন্য খুব আনন্দদায়ক ছিল। বিভিন্ন শহরের অনেক মানুষ এমনকি কখনো কখনো কিশোররাও এত সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করে, এত সাবলীলভাবে না দেখে তেলাওয়াত করে যা আমার বড় প্রত্যাশারই প্রতিফলন। দেখতে পাচ্ছি বড় প্রত্যাশাটি পূরণ হতে যাচ্ছে, প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি আল্লাহকে বার বার ধন্যবাদ জানাই। যতটা পারেন কুরআনের সাথে নিজেকে ঘনিষ্ঠ করুন। কুরআনে সব কিছুই আছে। 

আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, ইসলামি জীবনধারা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, এসব আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উপাদানগুলো অর্জন ও বাস্তবায়নের জন্য যুগোপযোগী পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। ছাত্র সমাজকে নানা সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি এসব উপাদান অর্জন ও বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ ও সংগ্রাম করতে হবে। 

তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে বলেন, দুটি শিরোনামের মধ্যেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সাধারণ উদ্দেশ্য চলে আসে। 'ইসলামের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা' এবং 'একটি দেশকে কীভাবে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় তার একটি মডেল বিশ্বের সামনে তুলে ধরা'। এ লক্ষ্যে তিনি বিপ্লবের প্রতি নিষ্ঠাবান সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ন্যায়পরায়ণতা বা সুবিচারকে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। ন্যায়পরায়ণতা মানে শ্রেণি ব্যবধানকে উপেক্ষা করে জনসাধারণকে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। (সরকারি) সুযোগ-সুবিধা সব মানুষের নাগালের মধ্যে থাকতে হবে। (সরকারি) সুযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া মানে জুলুম করা। এটা সুবিচারের পরিপন্থী। ন্যায়বিচার শুধু আর্থিক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। মান-সম্মান, কাজ-কর্ম, পেশা, মর্যাদা- এই সব বিষয়েই ন্যায়বিচার বজায় রাখতে হবে।  

তিনি বলেন, একজন ছাত্রের প্রধান কাজ হলো লেখাপড়া করা, কিন্তু এর পাশাপাশি তাকে মানুষ ও সমাজের দিকে তাকাতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে।

দুর্নীতিবাজ, বিশ্বাসঘাতক ও পরনির্ভরশীল পাহলভি শাসনামলের বাস্তবতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, সে সময় ইরানের মতো মহান দেশের জনগণের ওপর রাজত্ব করছিল একটি দুর্নীতিবাজ ও নির্লজ্জ পরিবার। তারা গোটা দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করেছিল। আজ দেশের সব ইস্যুতে জনগণের যে সম্পৃক্ততা তখন তা ছিল না।

জ্ঞান হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান স্তম্ভ-এ কথা উল্লেখ করে ইসলামি বিপ্লবের নেতা তার বক্তব্যের অন্য অংশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রধান দায়িত্ব হলো- জ্ঞানী মানুষ তৈরি করা, জ্ঞান উৎপাদন করা এবং এই দু'টি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। তবে তৃতীয় দায়িত্ব পালনের বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ত্রুটি রয়েছে, জ্ঞানী তৈরি ও জ্ঞান উৎপাদনের বিষয়টিকে সঠিক দিকে ধাবিত করতে পারছে না তারা। এ কারণে তাদের তাদের অর্জনগুলো সাম্রাজ্যবাদী এবং ইহুদিবাদী শক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠছে। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ত্রুটির কারণে বিজ্ঞান ইহুদিবাদী শক্তিগুলোর হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নিজেদেরকে পশ্চিমাদের অনুকরণকারী হিসেবে তুলে ধরে গর্ব করার প্রবণতা গড়ে তোলার একটা অপচেষ্টা ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে-এ কথা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোকে সক্রিয়ভাবে এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।#

পার্সটুডে/এসএ/০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।  

ট্যাগ