ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হজবাণী: গাজা ট্র্যাজেডি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে
(last modified Sun, 16 Jun 2024 15:14:23 GMT )
জুন ১৬, ২০২৪ ২১:১৪ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হজবাণী: গাজা ট্র্যাজেডি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে

পবিত্র হজ-২০২৪ উপলক্ষে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বাণী দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, গাজা ট্র্যাজেডি এবং  নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার মূর্ত প্রতীক পতনশীল ইহুদিবাদী ইসরাইলের ঔদ্ধত্য কোনো মুসলিম ব্যক্তি, দল, সরকার ও সম্প্রদায়ের সামনে এ ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা ও সহ্যের সুযোগ অবশিষ্ট রাখে নি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পূর্ণাঙ্গ হজবাণীর বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো:

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ওয়ালহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ'লামিন ওয়াস সালাতু ওয়াসসালামু আলা খাইরিল বারিয়্যাতি সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদিল মুস্তাফা ওয়া আলেত্বাইয়িবিনা ওয়া সাহবিহিল মুনতাজিবিনা, ওয়া মান তাবিয়াহুম বিইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দিন।

যে হৃদয়গ্রাহী ইব্রাহিমি সুর আল্লাহর নির্দেশে সব যুগেই হজের মৌসুমে সব মানুষকে কাবার দিকে আহ্বান করে, তা এ বছরও সারা বিশ্বের বহু মুসলমানের হৃদয়কে একত্ববাদ ও ঐক্যের এই কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট করেছে এবং বৈচিত্র্যময় বিশাল জনসমাবেশের জন্ম দিয়েছে, মানবিক পরিধি ও ইসলামের আধ্যাত্মিক উপাদানের শক্তিকে স্বজাতি ও বিজাতির সামনে তুলে ধরেছে।  

হজের বিশাল সমাবেশ এবং বহুমাত্রিক ও পর্যায়ক্রমিক আচার-অনুষ্ঠানকে চিন্তাশীল দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করা হলে তা একজন মুসলমানের জন্য শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে শত্রু এবং অকল্যাণকামীদের মনে ভয় ও বিস্ময়ের জন্ম দেয়। মুসলিম উম্মাহর শত্রু ও অকল্যাণকামীরা হজের এই দু'টি দিক সম্পর্কেই নানা সন্দেহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এমনটি ঘটলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই; তারা মাজহাবগত ও রাজনৈতিক পার্থক্যকে বড় করে তুলে ধরে অথবা হজের পবিত্র ও আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে এই কাজ করতে পারে।

পবিত্র কুরআন হজকে আল্লাহর দাসত্ব, আল্লাহর স্মরণ ও নম্রতার বহিঃপ্রকাশ; মানুষের সমমর্যাদা, বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জীবনের সুশৃঙ্খলার বহিঃপ্রকাশ, কল্যাণ ও সুপথের বহিঃপ্রকাশ, (মুসলিম) ভাইদের মধ্যে নৈতিক প্রশান্তি ও  কার্যকর সমঝোতার বহিঃপ্রকাশ এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও  দৃঢ় অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরেছে।

হজ সম্পর্কিত আয়াতগুলো এবং এই তুলনাহীন ফরজ দায়িত্বের আচার-অনুষ্ঠানাদির মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি এসবের রহস্যগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে হজের জটিল সংমিশ্রন আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

হাজি ভাই ও বোনেরা, আপনারা এখন এই সত্য ও সমৃদ্ধ শিক্ষা অনুশীলনের অঙ্গনে অবস্থান করছেন। নিজেদের চিন্তা এবং কর্মকে এই সত্য ও শিক্ষার কাছাকাছি নিয়ে আসুন। এই মহৎ বিষয়গুলোর মিশ্রণ ঘটিয়ে পুনরুদ্ধারকৃত আত্মপরিচয় নিয়ে ঘরে ফিরুন। এটাই আপনার হজের মূল্যবান এবং সত্যিকারের উপহার সামগ্রী।

অতীতের তুলনায় এ বছর বারাআতের বিষয়টি বেশি গুরুত্ববহ। আমাদের সমসাময়িক ইতিহাসের নজিরবিহীন গাজা ট্র্যাজেডি এবং  নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার মূর্ত প্রতীক পতনশীল ইহুদিবাদী ইসরাইলের ঔদ্ধত্য কোনো মুসলিম ব্যক্তি, দল, সরকার ও সম্প্রদায়ের সামনে এ ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা ও সহ্যের সুযোগ অবশিষ্ট রাখে নি। এই বছরের বারাআত (মুশরিকদেরকে প্রত্যাখ্যান) হজ মৌসুম ও মিকাত (ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত সব দেশ ও শহরে বিস্তৃত করতে হবে এবং হাজিদের বাইরেও তা সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার সহযোগী গোষ্ঠী বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বারাআতের বিষয়টি সব জাতি এবং সরকারের কথা ও কাজে প্রকাশ পেতে হবে এবং জল্লাদদের জন্য ক্ষেত্র সংকুচিত করতে হবে।

ফিলিস্তিনের ইস্পাত-কঠিন প্রতিরোধ এবং গাজার ধৈর্যশীল ও নির্যাতিত মানুষদের প্রতি অবশ্যই সর্বতোভাবে সমর্থন দিতে হবে। গাজার মানুষের ধৈর্য ও প্রতিরোধের মহিমা গোটা বিশ্বকে তাদের প্রশংসা করতে ও তাদের প্রতি সম্মান জানাতে বাধ্য করেছে।

আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দ্রুততার সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ বিজয় এবং প্রিয় হাজিদের হজ যাতে কবুল হয় সে জন্য দোয়া করছি। হজরত বাকিয়াতুল্লাহ'র (তাঁর জন্য প্রাণ উৎসর্গ হোক) দোয়া আপনাদের সঙ্গে থাকুক।

ওয়াসসালামু আলাইকুম

সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী

৪ জিলহজ, ১৪৪৫ (১১ জুন, ২০২৪)

ফার্সি ২২ খোরদাদ  ১৪০৩

পার্সটুডে/এসএ/জিএআর/১৫