ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রশংসা করে খামেনেয়ীর কাছে ইরানের সুন্নি আলেমদের চিঠি সম্পর্কে
(last modified Wed, 09 Oct 2024 13:50:04 GMT )
অক্টোবর ০৯, ২০২৪ ১৯:৫০ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সুন্নি আলেমদের সাক্ষাৎ
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সুন্নি আলেমদের সাক্ষাৎ

পার্সটুডে- ইরানের সুন্নি আলেমরা ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতাকে লেখা এক যৌথ চিঠিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-টু’ অভিযানের প্রশংসা করেছেন।

সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ীকে সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠিতে তিন হাজার ইরানি সু্ন্নি আলেম ইসরাইল বিরোধী অভিযানে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এর প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। এই চিঠির একটি অংশে বলা হয়েছে, মর্যাদাপূর্ণ আত্মসংযমের পর মহামান্যের শক্তিশালী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী গত ১ অক্টোবর ইসরাইলের হৃদপিণ্ডে যে আঘাত হেনেছে তা ছিল মুসলিম উম্মাহর ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। এই অভিযান শহীদদের পরিবারের শোকাহত হৃদয়, অসহায় ফিলিস্তিনি জনগণ ও সমস্ত স্বাধীনচেতা মানুষের মনে আবারও স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং পবিত্র আল-কুদস মুক্তির লক্ষ্যে লড়াইরত মানুষেরা ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছে।

যেসব আলেম ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে চিঠি লিখেছেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন শহর ও এলাকার মসজিদের খতিব, ইমাম ও ওয়াজকারী রয়েছেন। তারা ঐ চিঠিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার গত শুক্রবারের খুতবার প্রশংসা করেছেন। তারা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.)'র আদর্শের প্রতি নিজেদের আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা আরো বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতার দিক নির্দেশনায় এবং বীর মুজাহিদদের অংশগ্রহণে শিশু হত্যাকারী ও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের বিরত্বপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

পার্সটুডে রিপোর্ট অনুসারে, ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ কাজেম আম্বারলুই এই গুরুত্বপূর্ণ চিঠিকে কয়েকটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই চিঠির প্রথম বার্তা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যা কিনা ইসরাইল ও তার পাশ্চাত্য  মিত্রদের আকাঙ্ক্ষার ঠিক বিপরীত।  এই চিঠির ভাষা থেকে বোঝা যায় যে, শিয়া ভাইদের পাশাপাশি সুন্নিরাও অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং দখলদার ইসরাইলের অপরাধের ব্যাপারে চুপ থাকতে প্রস্তুত নয়। অর্থাৎ  বায়তুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আপামর মুসলিম জনসাধারণ সবাই ঐক্যবদ্ধ। যখন মিশরীয় এবং মরক্কোর নাগরিকরা শুক্রবার জুমার নামাজে দেয়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যের প্রশংসা করে সোশাল মিডিয়ায় সরব থাকে, যখন জর্ডান ও ইরাকিরা ইসরাইলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ব্যাপারে উদ্দীপনাময় শ্লোগান দেয়, তখন তা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ছাড়া আর কিছুই নয়। একইসাথে পাকিস্তান, ভারত, তুরস্কসহ আরো অনেক দেশের জনগণের বৃহৎ জনসমাবেশের কথাও উল্লেখ করা যায়।

এই চিঠির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ব্যাপারে তাদের অবস্থান। কারণ শত্রুরা তাদের মিডিয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনের বর্তমান ঘটনার জন্য ইরানের নেতৃত্বে প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দায়ি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে যাতে সুন্নি মুসলমানরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে মাথা না ঘামায়।  ইরানের সর্বোচ্চ কাছে লেখা সুন্নি আলেমদের চিঠিতে ব্যবহৃত কিছু শব্দের ব্যবহার ছিল নজরকাড়ার মতো। যেমন, তারা ঐক্য ও জিহাদের ওপর জোর দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায়, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ঐক্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। যেমন, সুন্নি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস, শিয়া ইসলামি জিহাদ আন্দোলন, হিজবুল্লাহ  ও আনসারুল্লাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জুমার নামাজের খুতবার একটি অংশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরবি ভাষায় দেয়া বক্তৃতায় আরবদেরকে উদ্দেশ্য করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আল আকসা  তুফান অভিযানের গুরুত্বের  নানা দিক তুলে ধরেছেন।    

যাইহোক, আজ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে দেড় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আরববিশ্ব ও মুসলিম দেশগুলোর কিছু আলেম এখনও ইসরাইলি নৃশংসতার ব্যাপারে নীরব রয়েছে এবং কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু ইমাম খামেনেয়ীর নেতৃত্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে জোরালোভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে, যার জন্য ইরানকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। শত্রুরা ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও ইরান এটিকে মুসলমানদের প্রধান সমস্যা হিসেবে আবারো  বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ