স্পাইগেলের সাথে আব্বাস আরাকচির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার: পশ্চিমাদের সমালোচনা
(last modified Sat, 09 Nov 2024 12:48:51 GMT )
নভেম্বর ০৯, ২০২৪ ১৮:৪৮ Asia/Dhaka
  • স্পাইগেলের সাথে আব্বাস আরাকচির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার
    স্পাইগেলের সাথে আব্বাস আরাকচির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার

পার্সটুডে-ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক আলাপচারিতায় বলেছেন: ৭ অক্টোবর খামোখাই ঘটেনি। জার্মানরা ইহুদিদের সাথে যে আচরণ করেছে তার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।

পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি জার্মান সংবাদপত্র স্পাইগেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সন্ত্রাসী জামশিদ শারমেহেদের মৃত্যুদণ্ড, পশ্চিমাদের দ্বিমুখি নীতি, ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার বিষয়ে জার্মানির নীরবতা, রাশিয়ার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি না করা এবং রাশিয়াকে ইরানের সহায়তা না করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারমেহেদ'র মৃত্যূদণ্ড সম্পর্কে বলেন: জামশিদ শারমেহেদ ছিলেন একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা। এই সত্যটি আমাদের জার্মানির বন্ধুরা এড়িয়ে যান এবং উল্লেখ করতে পছন্দ করেন না।

তিনিবলেন: শারমেহেদ শিরাজের একটি মসজিদে বিস্ফোরণের দায়িত্ব নিজেই স্বীকার করেছে। ওই সন্ত্রাসী হামলায় ৫ নারী ও শিশুসহ ১৪জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছিল।

আরাকচি বলেন: শারমেহেদের এই স্বীকারোক্তি গ্রেপ্তারের পরে নয় আগের ঘটনা। তিনি যখন আমেরিকায় ছিলেন, তখন টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে সাক্ষাত্কারে এই সন্ত্রাসী কাজের কথা গর্বভরে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: আমরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে যুদ্ধে প্রবেশ করেছি এবং তাদের হত্যা করছি। তাই ১৪ জনের খুনি সুস্পষ্ট অপরাধী হিসেবে ওই সন্ত্রাসীর শাস্তি নিশ্চিত করেছে আদালত।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: আমি আশা করি জার্মান সমাজ এবং তাদের কর্মকর্তারা এই সত্যকে মেনে নেবে। যদি তারা মনে করে মিস্টার শারমেহেদ একজন জার্মান, তাহলে তাদের স্বীকার করা উচিত যে তিনি একজন জার্মান সন্ত্রাসী।

তিনি বলেন: শারমেহেদকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটা নিছকই ধারনা। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ কর্তৃক সহিংসতা হয়ে থাকতে পারে সেটাকে নির্যাতন বলা হয় না। আমি জার্মানিতে একটি দৃশ্যও দেখেছি পুলিশের গাড়িতে একটা দাগ দেওয়ার কারণে জার্মান পুলিশ এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে।

 

বর্তমান জার্মান সরকার মানবাধিকারকে পদদলিত করেছে

আরাচি বলেছেন: আমি ইউরোপ ও আমেরিকার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই, যা সম্পূর্ণ বলদর্পী। যদি একজন জার্মানকে গ্রেপ্তার করা হয়, আপনি বলবেন যে তাকে অবশ্যই অপহরণ করা হয়েছে। তার অপরাধের প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টি দেবেন না। কিন্তু আপনারা যখন কাউকে গ্রেপ্তার করেন তখন বলেন ন্যায় বিচার করা হয়েছে। তার মানে  ইউরোপ নিজেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে মনে করে এবং অন্যদের আদালতকে অন্যায্য বলে ভাবে; এটা মানবীয় মূল্যবোধের অপমান। ইউরোপের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণই পরিস্থিতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন: আপনারা শারমেহেদের জন্য এতো সরব হলেন অথচ গাজায় নিহত ৫০ হাজার মানুষের জন্য এতটুকু আওয়াজও তোলেন নি।

 

গাজায় ৫০ হাজার মানুষ হত্যার নিন্দা করে নি জার্মানি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন: ইহুদিবাদী ইসরাইলিদের আগ্রাসনে গাজায় ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আমরা জার্মান সরকারকে এমনকি একটু নিন্দা জানাতেও দেখি নি, মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতেও দেখি নি, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে কিংবা আল-কুদস দখলদারদের অফিস বন্ধ করতেও দেখি নি। এগুলো সবই তাদের দ্বিমুখি নীতি।

 

ইসরাইলের সঙ্গে জার্মানির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে

আরাকচি স্পষ্ট করে বলেছেন: সমস্যাটি এখানেই, ইসরাইলের সাথে জার্মানির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, তাই মানুষ হত্যা আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

৭ই অক্টোবরের সিদ্ধান্ত ছিল একান্তই হামাসের। তারা আমাদের সঙ্গেও আলোচনা করেনি। তবে এই সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল, ইতিহাস সেটা বিচার করবে। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত; যা ঘটেছে সবই ৮০ বছরের একটি জাতির ভূমি দখল এবং জনগণকে বাস্তুচ্যুত করাসহ ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা ও গণহত্যার ফল। এটা গাজা নামের একটি বৃহৎ কারাগারে ২০ লাখ মানুষকে আটকে রাখার ফল। তাদেরকে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ফল। এইসব কারণ বিবেচনা করা আবশ্যক। ৭ অক্টোবর এমনি এমনি ঘটেনি। জার্মানরা ইহুদিদের সাথে যে আচরণ করেছে তার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণকে শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এমনকি তারা আলোচনার টেবিলেও বসেছে কিন্তু আলোচনায় তারা কী পেয়েছে?

 

পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে নি

আরাকচি বলেন: ইরানের বিপ্লব ছিল আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল এক স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। আমাদের বিপ্লবের স্লোগান ছিল; স্বাধীনতা ও মুক্তি। বিপ্লবের পরবর্তীকালে যাদের সাথে আমাদের আদর্শিক অভিন্নতা রয়েছে আমরা তাদের সমর্থন করেছি। আমরা আপনাদের মত হামাস ও হিজবুল্লাহকে প্রক্সি বলি না বরং তারা স্বাধীনতা আন্দোলন করছে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই করছে। আমি তাদের সংগ্রামকে তাই মুক্তি আন্দোলন বলি। হামাস এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকৃত ভূমির মুক্তির জন্য লড়াই করে, হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননের মুক্তির জন্য লড়াই করেছিল।

 

যে কেউ পশ্চিমা নীতির বিরুদ্ধে যায় সে-ই সন্ত্রাসী

তিনি বলেন, যারাই পশ্চিমের নীতির বিরুদ্ধে যায় তারাই সন্ত্রাসী আর যে কেউ পশ্চিমাদের নীতি অনুসরণ করবে সে ভালো বন্ধু। এটা আপনাদের একটা দ্বিমুখি নীতি এবং ভুল নীতি, আমাদের নয়।

আরাকচি বলেন: ইউরোপ সভ্যতা এবং মানবাধিকারের প্রতীক নয়। অন্যদেরকেও সম্মান করুন! কেবল নিজেকেই সঠিক অবস্থানে রাখবেন না, অন্যকেও তাচ্ছিল্য করবেন না!

 

আমরা কখনোই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করি নি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: আমরা কখনই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করি নি। আমরা দ্বীপ ও দোনবাস প্রদেশ দখলকে কখনোই স্বীকৃতি দিইনি। আমরা প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে সমর্থন করেছি।

আরাকচি বলেন: ভুলে যাবেন না আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপের মধ্যে বাস করছি। ভুলে যাবেন না ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোও তা অনুসরণ করছে। আমরা কার কাছে কী বিক্রি করব বা না করব-সেটা বলে দেওয়ার মতো অবস্থায় আপনারা নেই।

 

ইরান রাশিয়ার কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করে নি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন: তবে আমি আপনাকে বলছি যে ইরান রাশিয়ার কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করে নি। এমনকি মি. জেলেনস্কিও কয়েকদিন আগে এই সত্য প্রত্যয়ন করেছেন। ইউরোপ যদি ইউক্রেনকে মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয় সেটা ইউরোপের সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়।

আরাকচি বলেন: আপনারা ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আপনি ভুলে গেছেন যে আমাদের পরমাণু শিল্প জার্মানির সহায়তায় শুরু হয়েছিল। অথচ সেই জার্মানিই বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানকে পরিত্যাগ করেছিল। সুতরাং আমরা আমাদের প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে রাশিয়ার সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়েছি। এই ভুলগুলো ছিল জার্মান সরকারের, এখন আবার যেন ভুল করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

পুরো অঞ্চল একটা সর্বাত্মক যুদ্ধে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: বিগত বছরে ইসরাইল যখন গাজায় তাদের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল, তারা ইরানকে একটি বৃহৎ যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা আমাদের বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলের সাথে একটি বৃহৎ যুদ্ধকে প্রতিরোধ করেছি। তবে আমি আপনার সাথে একমত যে কখনও কখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইসরাইল যদি এই যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তারা উপযুক্ত জবাব পাবে।#

পার্সটুডে/এনএম/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।