গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইরান যেভাবে শীর্ষস্থানে পৌঁছল
-
গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইরান যেভাবে শীর্ষস্থানে পৌঁছল
পার্সটুডে- গত দুই দশকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলসহ বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং অবস্থানের বিষয়টি বেশ লক্ষ্যণীয়।
এই অঞ্চলের দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। চিকিৎসা সেবার মানও উন্নত হয়েছে। যেকারণে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ইরানের স্বাস্থ্য পরিষেবা বেশ এগিয়ে আছে।
পার্সটুডের-প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইরান উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারা কয়েকটি দেশের মধ্যে ইরান অন্যতম।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা জাফরকান্দি বলেছেন, গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে ইরান বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের প্রথম ৩টি দেশের মধ্যে রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার ফলে এই অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।
ইরানের সরকার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সংস্থাগুলির ব্যাপক প্রচেষ্টার ফলে দেশটির স্বাস্থ্যসেবার এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গৃহীত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর কয়েকটি হল:
১) স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন: স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ ও সজ্জিত করা, ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন নেওয়া।
২) স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম: জেনেটিক রোগের জন্য স্ক্রীনিং, ভ্রূণের জেনেটিক রোগ সনাক্ত করার জন্য স্ক্রীনিং পরীক্ষা করা, সংক্রামক রোগের জন্য স্ক্রীনিং এবং গর্ভবতী মায়েদের হেপাটাইটিস এবং এইডসের মতো সংক্রামক রোগের সময়মত নির্ণয় ও চিকিত্সা প্রদান।
৩) শিক্ষা ও তথ্য: কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ ক্লাসের আয়োজন, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি, প্রসবপূর্ব যত্ন, প্রাকৃতিক প্রসব এবং বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পর্কে শিক্ষিত করা, গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মিডিয়া ব্যবহার এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা জানানো।
৪) প্রাকৃতিক প্রসবের প্রচার: প্রাকৃতিক প্রসবকে সহায়তা করা, মায়েদের স্বাভাবিকভাবে জন্ম দিতে উৎসাহিত করা এবং অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশনের সংখ্যা কমানো, ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ প্রাকৃতিক প্রসবের জন্য ধাত্রীদের জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নতি করা।
৫) ওষুধ ও খাদ্য সম্পূরক বিনামূল্যে বিতরণ: আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড বিতরণ, গর্ভবতী মায়েদের রক্তাল্পতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা এবং গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬) সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা: গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের খরচসহ পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা হ্রাস করা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার অ্যাক্সেস বৃদ্ধি করা।
৭) পুষ্টি কর্মসূচি: খাদ্য বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় গর্ভবতী মায়েদের খাবারের ঝুড়ি প্রদান, স্বাস্থ্যকর খাবারের বিষয়টি শেখানো এবং গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি সম্পর্কে মায়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি।
৮) বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের সহায়তা করা: বুকের দুধ খাওয়ানোকে উৎসাহিত করা, ছয়মাস পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রচার এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা, বুকের দুধ খাওয়ানোর শিক্ষা এবং মায়েরদের সঠিকভাবে স্তন্যপানের কৌশল শেখানো।
সবশেষে বলা যায় যে, গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইরানের অবস্থানের উন্নয়ের ফলে দেশটি উল্লেখযোগ্য অবস্থানে পৌঁছেছে। ইরানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি নির্ভরযোগ্য আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে।#
পার্সটুডে/জিএআর/৪