ইসলামী জাতির ঐক্যকে সমর্থন করা ইরানের অন্যতম অগ্রাধিকার: লারিজানি
-
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি
পার্সটুডে-ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব, পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী এবং ধর্মীয় নেতাদের সাথে এক বৈঠকে, দেশটির কর্মকর্তাদের সাথে চুক্তির বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
সেইসঙ্গে বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা এবং ট্রানজিট ও রেল লাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি এবং পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিয়া ও সুন্নি পণ্ডিতসহ অন্যান্য ব্যক্তিত্বদের একটি দলের মধ্যে ইসলামিক ঐক্য জোরদার করার, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে সমর্থন করার এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি
পাকিস্তানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে ড. লারিজানি দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চুক্তি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন: বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার জন্য চুক্তি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান সক্ষমতাগুলো ব্যবহারের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।" তিনি আরও বলেন: "পাকিস্তানের কিছু চাহিদা ইরানের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সেইসাথে নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে সমাধানের জন্য দুই দেশের পরিপূরক বাজারকে আরও প্রসারিত করার বিষয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে।"
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে ট্রানজিট অবকাঠামোর উন্নয়ন
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট এবং রেল লাইন সম্প্রসারণেরও ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই পদক্ষেপগুলো যাত্রীদের চলাচল এবং প্রয়োজনীয় পণ্য স্থানান্তরকে সহজতর করবে। তিনি এই চুক্তিগুলোকে তেহরান ও ইসলামাবাদের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিনিময়কে সহজতর করার জন্য বিবেচনা করেছেন।
পাকিস্তানের সমর্থনের প্রশংসা
ওই বৈঠকে ড. লারিজানি ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে পাকিস্তানি জনগণ এবং পণ্ডিতদের অবস্থান ও সমর্থনের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি এই সমর্থনকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধনের গভীরতার লক্ষণ বলে উল্লেখ করেন। আঞ্চলিক সমস্যা ও ইসলামী উম্মাহর চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন: ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করা এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনের লক্ষ্যে পাকিস্তানসহ অনেক ইসলামী দেশের নেতাদের সাথে তার আলোচনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
বিভেদ সৃষ্টিকারী পশ্চিমা নীতি সম্পর্কে সতর্কীকরণ
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব, মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির পশ্চিমা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: পশ্চিমারা সবসময় মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে এবং দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চায় যাতে তাদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে এবং এই কারণে, ইসলামী উম্মাহর ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য ইসলামী দেশগুলোর নেতাদের, বিশেষ করে সামাজিকভাবে উচ্চ প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের, সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।" তিনি জোর দিয়ে বলেন: "পশ্চিমাদের বিভেদ সৃষ্টিকারী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং ইসলামী উম্মাহর ঐক্যকে সমর্থন করা ইসলামী ইরানের প্রধান অগ্রাধিকার।"
ইসলামী উম্মাহর ঐক্যের ওপর পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতাদের গুরুত্বারোপ
ওই সভায় পাকিস্তানি আলেম এবং ধর্মীয় নেতারা ইসলামি উম্মাহর ঐক্য, ইরান ও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার উপরও জোর দেন। ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন: "এই কর্মসূচি ইসলামী উম্মাহর জন্য প্রতিরোধ ও শক্তি তৈরির স্বার্থে খুবই প্রয়োজনীয় এবং ইরান কখনও যুদ্ধ চায় নি, কখনও কোনও দেশের ওপর আক্রমণও করেনি।"
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ
বৈঠকে ইসলামী দেশগুলোর নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যাতে শত্রুরা দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারে। পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতারা বলেছেন: প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা বিকাশ করা, একটি আঞ্চলিক ব্লক তৈরি করা এবং দুই দেশ, ইসলামী জাতি এবং আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।#
পার্সটুডে/এনএম/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন