মার্কিন সিনেটেও ইরানবিরোধী বিল পাস: কী করবেন ওবামা?
ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন সরকার ও বিরোধী পক্ষের ৯৯ জন সিনেটর। ইরান স্যাংশন অ্যাক্ট বা আইএসএ নামের ওই বিলটি এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্ট তাতে সই করলে আরো ১০ বছরের জন্য ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন সিনেটে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নবায়ন করা থেকে তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের বিদ্বেষী ও শত্রুতামূলক আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। আমেরিকা ইরানের তেল ও গ্যাস খাতে বিদেশি বড় ধরণের পুঁজি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করার জন্য ১৯৯৬ সালে প্রথম তেহরানের বিরুদ্ধে ওই একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এরপর অর্থাৎ ২০০৬ সালে ফের ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। চলতি বছর ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
মার্কিন সিনেটে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন লাভের আগে বিলটি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদেও প্রায় সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছিল। এতে ৪১৯ জন বিলটির পক্ষে এবং একজন বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসের উভয়কক্ষ ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা নবায়ন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই বিলের প্রতি সমর্থন দেবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জশ আরনেস্ট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা নবায়নের বিষয়ে নিজের এখতিয়ার বা ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই বিলে প্রেসিডেন্টের সই করা না করাটাও খুব একটা জরুরি বিষয় নয়। কারণ প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই বিলে ভেটো দিলেও তা আইনে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ বহু সংখ্যক ভোটে মার্কিন সিনেটে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞার বিল পাশ হয়েছে। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কোনো বিলে ভেটো দিলেও প্রতিনিধি পরিষদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য একমত হলে ওই ভেটো বাতিল করে দিতে পারবেন।
যাইহোক, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস ইরানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা জরুরি বলে মনে করে। সিনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাক কানেল দাবি করেছেন, তার ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ঠেকানোর জন্য ওই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা জরুরি। তিনি আরো বলেছেন, আমরা আশা করি আমেরিকার নতুন কংগ্রেস সদস্য এবং নতুন সরকার ইরানের ব্যাপারে নীতি পুনর্মূল্যায়ন করে কঠোর অবস্থানে চলে যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিল পাশ করা থেকে বোঝা যায়, পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ইরান যে সৎ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিল ওয়াশিংটন তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা নবায়ন করার অর্থ হচ্ছে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপানো এবং পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করা। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করা হলে ইরানও পাল্টা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে।#
পার্সটুডে/মোঃ রেজওয়ান হোসেন/২