ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে মস্কো ও আঙ্কারার সঙ্গে তেহরানের সম্পর্কের গুরুত্ব
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে দেয়া সাক্ষাতে বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের জন্য সবচেয়ে জরুরি।
তিনি বলেন, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বের দাম্ভিক শক্তিগুলো মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায় না এবং তারা একটি সম্ভাব্য মুসলিম শক্তিকে প্রচণ্ড ভয় পায়। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যে বিরাট শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে তা আমেরিকার বিদ্বেষ ও দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ইরান ও তুরস্ক এ অঞ্চলের প্রভাবশালী ও মর্যাদা সম্পন্ন দু'টি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ এবং মুসলিম বিশ্বের ব্যাপারে তেহরান ও আঙ্কারা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এ কারণে আর্থ-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বিস্তারে এ দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী উল্লেখ করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও সাক্ষাতে বলেছেন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আন্তর্জাতিক বহু সমস্যার সমাধান করতে পারে। তিনি পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টের ইতিবাচক মনোভাবের প্রশংসা করে বলেছেন, ইরানের জনগণের সম্মান ও স্বার্থের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তেহরান পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে নিজের অবস্থান গ্রহণ করবে।
রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের সর্বোচ্চ আরো বলেছেন, আমেরিকা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনার দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে তারা ইরানের কাছে এর চেয়ে আরো অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, আমেরিকা গত ৪০ বছর ধরে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থা উৎখাতের চেষ্টা চালিয়ে আসলেও এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্ক ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু এ অঞ্চলের বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংলাপ খুবই জরুরি। তাদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের সহযোগিতা এবং গতকাল (শুক্রবার) তেহরানে অনুষ্ঠিত এই তিন দেশের শীর্ষ সম্মেলন থেকে বোঝা যায়, তারা আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অভিন্ন হুমকি ও চাপ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে এই তিন দেশ সম্মিলিতভাবে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে পারে।
এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, তেহরান সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইরান ও রাশিয়া আর্থ-রাজনৈতিক সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে পারে। তিনি বলেন অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও মার্কিন আধিপত্য প্রতিরোধে এ দুই দেশ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ আমেরিকা মানবতার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাইহোক, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এই তিন দেশ এ অঞ্চলে আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকা রাখতে পারে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৮