জারিফের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, প্রতিক্রিয়া ও এর কারণ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাবনা
(last modified Thu, 01 Aug 2019 10:20:16 GMT )
আগস্ট ০১, ২০১৯ ১৬:২০ Asia/Dhaka
  • মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ
    মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি গ্রহণ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন শুধু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই এবার তারা ইরানের বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও নিষেধাজ্ঞার কাতারে ফেলে দিয়েছে।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় আজ ভোরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দক্ষ ও বিচক্ষণ কূটনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি আনুগত্যশীল হওয়ার কারণেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ আজ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, "তিনি বিশ্বব্যাপী ইরানের প্রধান মুখপত্রের ভূমিকা পালন করার কারণে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা।"

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেন: ইরানের প্রধান মুখপত্রের ভূমিকা পালনের বিষয়টি আমেরিকার জন্য এতটা বিপজ্জনক হয়ে গেল? জারিফ বলেন, মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে তিনি মস্তবড় হুমকি হতে পেরে আনন্দবোধ করছেন। তিনি আমেরিকাকে উদ্দেশ করে বলেন, "আপনাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে আমাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করার জন্য ধন্যবাদ।" জারিফ বলেন, অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত করে আনাই তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। তাদের মতে জাওয়াদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে মার্কিন সরকার আসলে অন্য দেশের কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করছে যাত তেহরান তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অবস্থান তুলে ধরতে না পারে এবং ওয়াশিংটনের বেআইনি ও অমানবিক পদক্ষেপ নিয়ে কোথাও কথা বলতে না পারে।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ থেকে তেহরানের শক্তিশালী অবস্থানের মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের চরম অচলাবস্থা ও দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যাপক অনুরোধ সত্বেও তেহরান তাতে রাজি না হওয়ায় মার্কিন কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন ইরানের এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে সংলাপে বসবেন যিনি সিদ্ধান্ত নয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু জারিফ সে ধরণের ব্যক্তি নন।" ওই মার্কিন কর্মকর্তার এ ধরণের বক্তব্য পর্যবেক্ষক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা রবার্ট হান্টার মার্কিন কর্মকর্তাদের এ ধরণের কথাবার্তার প্রতিক্রিয়া বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী জারিফের যদি সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো ক্ষমতা না থাকে এবং তিনি যদি ইরানের প্রতিনিধি না হয়ে থাকেন তাহলে কেন তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল।

বাস্তবতা হচ্ছে, জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে মার্কিন কর্মকর্তারা ভাল করেই জানেন যে, অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং বিশ্বের কাছে ইরানের ন্যায়সঙ্গত দাবি বা অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরার ক্ষেত্রে জারিফ অত্যন্ত দক্ষ ও ঝানু একজন কূটনীতিবিদ। এ থেকে জারিফকে বিরত রাখার জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হল। #                     

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১

ট্যাগ