সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল রাশিয়া
(last modified Tue, 25 Feb 2020 11:41:05 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ ১৭:৪১ Asia/Dhaka
  • রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ
    রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ

সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা ইদলিবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অগ্রগতি লাভ করায় তুরস্ক শুধু যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাই নয় একইসঙ্গে সন্ত্রাসীদের অনুকূলে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়ার বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ও কয়েকটি আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোটের নেতা হিসেবে আমেরিকাও সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তবে রাশিয়া আমেরিকার এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল সোমবার বলেছেন, সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আপোষ করা কিংবা তাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে মার্কিন প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতিসংঘের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় সিরিয়ার জাবহাতুন নুসরার নাম রয়েছে। এমনকি আমেরিকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায়ও জাবহাতুন নুসরার নাম রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মার্কিনীদের এ ধরনের প্রস্তাব এবারই নতুন নয় এবং তা মেনে নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ল্যাভরভ বলেন, আমেরিকা জাবহাতুন নুসরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্কসহ অন্যান্য আরব মিত্রদের সহযোগিতায় আমেরিকা সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাধিয়েছে এবং সিরিয়ার বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করছে। তবে আমেরিকা ও তার মিত্রদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে রাশিয়া ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ায় সেনা সমাবেশ ঘটায় এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে সিরিয়ার সেনাবাহিনী মিত্রদের সহযোগিতায় ইদলিব প্রদেশকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করার পথে রয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা চূড়ান্ত পরাজয়ের সম্মুখীন। এ অবস্থায় চূড়ান্ত পরাজয় থেকে সন্ত্রাসীদের উদ্ধারের জন্য দামেস্ক-মস্কো আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এদিকে, জাবহাতুন নুসরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জাতিসংঘের তালিকা থেকে তাদের নাম কাটানোর চেষ্টা করছে এবং এ জন্য নাম পরিবর্তন করে হায়াতুত তাহরির আশ শামস নাম রেখেছে। সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য তারা নাম পরিবর্তন করলেও বাস্তবতা হচ্ছে গত ক'বছরে এরাই সিরিয়াজুড়ে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে সিরিয়ায় জড়ো হয়েছিল।

২০১৮ সালে রাশিয়ার সুচি শহরে সমঝোতা অনুযায়ী কথা ছিল তুরস্ক সরকার সন্ত্রাসীদের থেকে সিরিয়ার সরকার বিরোধীদেরকে আলাদা করবে এবং যুদ্ধবিরতি যাতে কেউ লঙ্ঘন করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আঙ্কারা কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় সেনা ও রসদ পাঠাচ্ছে। এমনকি তুরস্কের সেনাবাহিনী সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে যা কিনা রাশিয়ার তীব্র প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়েছে। তুর্কি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে আজ সিরিয়ার নয় সেনা নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তুরস্ক সরকার সুচি শহরে অর্জিত সমঝোতা অনুযায়ী কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না।

বাস্তবতা হচ্ছে, আঙ্কারা সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকে পরিণত হয়েছে এবং সরাসরি তাদেরকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে এর পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের সমর্থনে সিরিয়া সেনাবাহিনীর ওপরও হামলা চালাচ্ছে। তুরস্কের এ পদক্ষেপ শুধু যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন তাই নয় একইসঙ্গে ইদলিবে সংঘাতের বিস্তার  ও দুদেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫