ইরান ইস্যুতে মার্কিন চোখ রাঙানি: আতঙ্কিত বিদেশি ব্যাংকগুলো
(last modified Sat, 30 Apr 2016 11:56:55 GMT )
এপ্রিল ৩০, ২০১৬ ১৭:৫৬ Asia/Dhaka

ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতার পর আমেরিকার ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলো ইরানের সঙ্গে লেনদেন করতে ভয় পাচ্ছে। জার্মানির শিল্প ও বণিক সমিতির প্রধান এরিক শাওয়াইতযের বলেছেন, ইউরোপের বেশিরভাগ ব্যাংকই মার্কিন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ভয়ে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বিস্তার জার্মানির অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হলেও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করারও সুযোগ থাকতে হবে।

মার্কিন নীতির বিরোধী ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ ব্যাংকও ইরান বিরোধী পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া, ব্রিটেনের ব্যাংক মালিকদের জোট বিবিআই ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিণতির বিষয়টি তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে। ইরানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য প্রতিনিধি লর্ড লামুন্ত বলেছেন, তার দেশ ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

তিন মাস আগে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ইউরোপের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা তেহরানের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারছে না এবং বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান বলছেন, ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারে প্রধান বাধা হচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকার পক্ষ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে শাস্তির ভয়ে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলো ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রয়েছে এবং এর ফলে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা কার্যত পূর্বের মতোই বহাল রয়েছে। ইউরোপীয়রা অভিযোগ করেছে, আমেরিকা যে নতুন ভিসা আইন চালু করেছে তাতে কোনো ব্যবসায়ী যদি ইরানে প্রবেশ করে তাহলে আমেরিকায় প্রবেশ করা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোনো লোক যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়ীক চুক্তিতে উপনীত হয় তাহলে তার জন্য আমেরিকায় সফর করা বা ব্যবসা করা আর কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ জাওয়াদ জারিফ মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, মার্কিন নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধার প্রতি ইরানের কোনো আগ্রহ নেই তবে তেহরান চায় ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন যেন কোনো বাধা না দেয়। অর্থাৎ সবাই যাতে ইরানের সঙ্গে বিনা বাধায় ও নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে।

ইউরোপ ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জার্মানি ছিল ইরানের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য শরিক দেশ। ইরান ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অসংখ্য বিমান যোগাযোগ ছিল। ইরানের তেল হল্যান্ডের রুতারদাম বন্দরে শোধনাগার হতো। এ ছাড়া, ইউরোপের শেল ও টোটালের মতো বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলোর ইরানে অনেক বড় বড় প্রজেক্ট ছিল। বর্তমানে সহযোগিতা শুরু করার ক্ষেত্রে অনেক বাধা থাকলেও ইউরোপীয়রা ফের ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক শুরু করতে আগ্রহী।

ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইতালির একটি কোম্পানি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ইরান থেকে নিয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এটাই প্রথম চালান। এ ছাড়া, গ্রিসের একটি তেল শোধনাগার কোম্পানিও গত ২০ এপ্রিল ইরানের অপরিশোধিত তেল নিজ দেশের খারক বন্দরে স্থানান্তর করেছে। নিষেধাজ্ঞার আগে এই দুই দেশ ইরানের সবচেয়ে বড় তেলের ক্রেতা ছিল। #

মোঃ রেজওয়ান হোসেন/৩০

ট্যাগ