রুহানি-ম্যাকরন ফোনালাপ: আমেরিকা কি পারবে ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাস করতে?
(last modified Thu, 13 Aug 2020 11:00:11 GMT )
আগস্ট ১৩, ২০২০ ১৭:০০ Asia/Dhaka

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, মার্কিন সরকার ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নবায়নের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছে তা এ পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন এবং সব দেশ বিশেষ করে পরমাণু সমঝোতায় সইকারী দেশগুলো মার্কিন ওই প্রস্তাবের বিরোধী।

তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের সঙ্গে ফোনালাপে এ কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি আরো বলেন, মার্কিন সরকার শুরু থেকে ইরানের পরমাণু সমঝোতাকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করে এসেছে; কাজেই আমেরিকার কথায় প্রভাবিত হওয়া বা এই দেশটির প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া ইউরোপের উচিত হবে না। টেলিফোনালাপে ফরাসি প্রেসিডেন্টও ইরানের পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইরানের ওপর আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ফ্রান্স আমেরিকার সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে। 

পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে আসার একইসঙ্গে মার্কিন সরকার যে কোনো উপায়ে তা নবায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী ১৮ অক্টোবর ইরান বিরোধী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এ মেয়াদ নবায়নের জন্য আমেরিকা যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া আমেরিকা দুই বছর আগেই পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছে। এ কারণে এ বিষয়ে কথা বলার আইনগত অধিকার তাদের নেই।

মার্কিন সরকার ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা ও শলাপরামর্শের পর ইরান বিরোধী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ তাতে সমর্থন দেয়নি। এরপর ভোটাভুটি পিছিয়ে দিয়ে আমেরিকা শক্ত অবস্থান থেকে সরে এসে কিছুটা নরম শর্তে প্রস্তাবটি সংশোধন করে তা ফের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমেরিকা আগের প্রস্তাব বদল করে নতুন যে ‘নরম প্রস্তাব’ দিয়েছে তাতে কোনো পার্থক্য নেই। এমনকি চীন ও রাশিয়াও সংশোধিত প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ‘আমেরিকা ওই  প্রস্তাব পাশে ব্যর্থ হবে এবং খোদ নিউইয়র্কে অনেকে ধারণা করছেন, ভোটাভুটিতে আমেরিকা খুব বেশি হলে একটি অথবা দুটি ভোট পেতে পারে’। 

এদিকে, মার্কিন সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাশে তারা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে ইরানের বিরুদ্ধে ‘মশে’ ম্যাকানিজম ব্যবহার করা হবে। যদিও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আইনগত অধিকারও আমেরিকা হারিয়েছ। ওই ম্যাকানিজম চালু করা হলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়টিকে আবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যে ওই পরিষদের সব নিষেধাজ্ঞা ইরানের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। এমনকি রাশিয়াও ‘মশে’ ম্যাকানিজম ব্যবহারের বিরোধিতা করায় ওয়াশিংটনের সামনে আর  কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।

যাইহোক, এ অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনের ফোনালাপ গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#  

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩