পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা: আন্তর্জাতিক সমাজের দায়িত্ব অবহেলাই কি এর জন্য দায়ী?
(last modified Sat, 28 Nov 2020 10:25:37 GMT )
নভেম্বর ২৮, ২০২০ ১৬:২৫ Asia/Dhaka

ইরানের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান মোহসেন ফাখরিজাদে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অগান্স ক্লামন্ড ওই সন্ত্রাসী হামলার পরপরই এক টুইট বার্তায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন বাইরে থেকে পরিচালিত টার্গেট করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ নীতিমালার পরিপন্থী। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা ইরানের বিজ্ঞানী হত্যার ইসরাইলি পদক্ষেপকে বেআইনি অভিহিত করে বলেছেন ২০১৮ সাল থেকে মোহসেন ফাখরিজাদেকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল ঘাতকরা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা ইসরাইলের পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডকে বেআইনি অভিহিত করা থেকে বোঝা যায় ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করে না এবং নিজের সম্প্রসারণকামী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের মত যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা দ্বিধা করছে না।

এর আগে এক অনুষ্ঠানে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘মোহসেন ফাখরিজাদের নাম মনে রাখা উচিত’। বলা যায় মোহসেন ফাখরিজাদে তখন থেকে ইসরাইলের টার্গেটে ছিলেন।

 গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বশীল জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের এক্ষেত্রে ভূমিকা কি সেটাই এখন প্রশ্ন। দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের একাধিক পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত ইরানের একাধিক পরমাণু বিজ্ঞানী শহীদ হলেন কিন্তু এ ধরনের অপরাধ প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে মার্কিন যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডারর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায়ও আন্তর্জাতিক সমাজ ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মৌখিক নিন্দা জ্ঞাপন করা ছাড়া বাস্তবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

যাইহোক ইরানের অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস ইসরাইলি এই অপরাধযজ্ঞের ব্যাপারে কঠোর নিন্দা ও স্পষ্ট অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে সব পক্ষকে সংযত হওয়ার এবং যে কোন উত্তেজনা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ ভূমিকায় এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইরান ইসরাইলের কোনো বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে নাকি ইসরাইল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতার সুযোগে ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে?

ধারণা করা হচ্ছে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে পাশ্চাত্য দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে এমনকি দুঃখজনকভাবে জাতিসংঘও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসাদ আবু খালীল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন ধরুন ইরান কিংবা মার্কিন সরকারের বিরোধী কোন দেশের সরকার যদি ইসরাইলের কোন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করত তাহলে আমরা দেখতে পেতাম পাশ্চাত্যের সরকারগুলো ও গণমাধ্যম থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো একযোগে এর বিরুদ্ধে কঠোর ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতো।

এদিকে জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধি মজিদ তাখতে রাভানচি জাতিসংঘ মহাসচিব এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের কাছে লেখা চিঠিতে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তিনি মার্কিন সবুজ সংকেতে ইসরাইলের এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানান।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৮

ট্যাগ