মানবাধিকার ইস্যুতে ইসরাইল ও পাশ্চাত্যকে সতর্ক করল ইরান
-
ইসমাইল বাকায়ি হামানে
ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে ইরান বলেছে, নৈতিক কারণে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার অধিকার কুদস দখলদার ইসরাইলের নেই। জাতিসংঘের ইউরোপীয় দপ্তরে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমাইল বাকায়ি হামানে তার দেশের বিরুদ্ধে তেল আবিবের এক ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একইসঙ্গে তিনি মানবাধিকারের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী আচরণেরও সমালোচনা করেন।
বাকায়ি হামানে বলেন, দুঃখজনকভাবে বিশ্বের কিছু শক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরতে গিয়ে ওইসব দেশের বৈধ শাসনব্যবস্থাকে আক্রমণ করে কথা বলে। জেনেভায় ইরানের এ কর্মকর্তা মানবাধিকারের ব্যাপারে দু'টি বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বাস্তবতাকে ঠিক উল্টো করে দেখানো। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)এর নবুওত প্রাপ্তি দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণেও এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কপটতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাস্তবতাকে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি নেই। কোনো ধরনের চক্ষুলজ্জা ও ভয় ছাড়াই তারা ডাহা মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব গত ছয় বছর ধরে ইয়েমেনের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়ে গেলেও পাশ্চাত্য এ সম্পর্কে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। যতক্ষণ ইয়েমেনিরা মার খাচ্ছিল ততদিন আমেরিকাসহ জাতিসংঘ পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন করেছে। কিন্তু যখনই ইয়েমেনিরা সৌদি আরবে পাল্টা হামলা শুরু করেছে তখনই পাশ্চাত্যের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়েছে। বাস্তবতা সম্পর্কে এর চেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর হতে পারে না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একইসঙ্গে জাপানে আমেরিকার পরমাণু বোমা হামলা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করেন।
এদিকে, দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, অবরোধ ও জবর দখলের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলি বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত বহু ফিলিস্তিনি শিশু নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে কিংবা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার শিশু ইসরাইলি জেলখানায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মানবাধিকারের ব্যাপারে দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে জেনেভায় ইরানের এ কর্মকর্তা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে এ পরিষদকে অপব্যবহার না করার আহ্বান জানান। জেনেভায় নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমাইল বাকায়ি হামানে এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ডে, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের মতো দেশগুলো নিজেদেরকে মানবাধিকার রক্ষার উন্নত আদর্শ মনে করে। তারা ভাবে, দেশের ভেতরে ও বাইরে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে বিশ্ববাসী ওয়াকিবহাল নয়। হামানে বলেন, এসব পশ্চিমা দেশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আগ্রাসী দেশগুলোর কাছে মারণাস্ত্র বিক্রি করার মাধ্যমে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরাতে ভূমিকা রাখছে; অথচ তারাই আবার মানবাধিকারের ধ্বজাধারী সেজেছে।
যাইহোক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ মানবাধিকার বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় মানবাধিকারের নীতিমালা আরো বেশি লঙ্ঘিত হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩