আগস্ট ১৭, ২০২১ ১৫:৫৪ Asia/Dhaka

আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী রাজধানী কাবুলসহ গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ওই দেশটির পরবর্তী সংকট নিরসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। এ ব্যাপারে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি ও কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে অনেকে জানতে চায়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ তেহরান সফরকারী আফগানিস্তান বিষয়ক চীনের বিশেষ প্রতিনিধি হু শিয়াও ইয়ং আফগানিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সাক্ষাতে জারিফ আফগানিস্তানের বিষয়ে তেহরানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেছেন, দেশটির বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে যে কোনো যুদ্ধ, সংঘাত কিংবা সহিংস পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্য অন্তর্বর্তী সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি ইরানের সমর্থন থাকবে। জারিফ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাস্তুহারা আফগান নাগরিকদের ঢল সামাল দেয়াকে 'এই মুহূর্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়' বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে করোনা মহামারীর এই সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দুঃসাধ্য ব্যাপারে বলে জানান জারিফ।

এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফের সঙ্গে সাক্ষাতে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সেদেশের জনগণের অধিকার উল্লেখ করে বলেছেন, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ইরান সব রকম সহযোগিতা করবে। একইসঙ্গে তিনি ওই দেশটিতে সব পক্ষের মধ্যে জাতীয় সমঝোতা অর্জনে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিবেশী সব দেশের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, ইসলামি ইরান বিশ্বাস করে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সেদেশের নেতৃবৃন্দের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি জরুরি। তিনি বলেন, ইরান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আফগান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং আমরা ওই দেশটির সঙ্গে সুপ্রতিবেশীসূলভ সম্পর্ক চাই। ইরানের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের ব্যর্থতা এবং সেখান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের পর ওই দেশটিতে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার  সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের অতীত ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় সেদেশের লড়াকু জনগণ সবসময় বিদেশি আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং অবশেষে তাদের পতন ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ বছর ধরে আফগানিস্তান জবর দখল করে রেখেছিল এবং এ সময়ে মধ্যে তাদের হাজার হাজার সেনা নিহত হওয়া ছাড়াও কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে তারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলেও যুদ্ধ ও সহিংসতা এখনো আগের মতোই আছে।

ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, গত বছর কাবুল সফরে গিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ওই দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, বর্তমান আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জ্বালাময়ী বক্তব্য থেকে বোঝা যায় গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। শামখানি আরো বলেন, গত ৪০ বছরের ন্যায় এখনো আফগান জনগণের ইচ্ছার প্রতি আমাদের সমর্থন বজায় থাকবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামি ইরান বহুবার বলেছে, আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য ইরান সব রকম সহযোগিতা করবে এবং প্রতিবেশী সব দেশ ও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে বলে তেহরান আশা করে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাবিত যাদেহ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা আশা করি আফগানিস্তানের সব পক্ষ রাজনৈতিক উপায়ে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে এবং আফগানিস্তানে যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন আফগানদের মাধ্যমেই সংকট সমাধানে ইরান সবসময় ওই দেশটির পাশে থাকবে। 

যাইহোক, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীণ তীব্র সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতি দেশটির জনগণের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই তাদের নিজেদের মধ্যে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#   

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬

ট্যাগ