শ্রোতাদের মতামত
আমার অনুভূতিতে রেডিও তেহরান
সালামুন আলাইকুম। আশা ও প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ’র অশেষ রহমতে আপনারা সকলে ভালো ও সুস্থ আছেন। ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার বারুইপাড়া থেকে রেডিও তেহরান বাংলা পরিবারের সকলের জন্যে রইল শিমুল- পলাশের একরাশ শুভেচ্ছা।
বসন্তের শুভাগমনে প্রকৃতির মাঝে এক অপরূপ সৌন্দর্যের মাদকতা উপলব্ধি করার সময় এখন। চারিদিকে আম, কাঁঠাল, লিচু বাগানের সমারোহ বাংলার প্রকৃতিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এসকল উদ্যানে উদ্যানে নব নব পুষ্পের সমারোহ আর তার সুগন্ধের মাদকতায় যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাদের। এই মনোমুগ্ধকর সুগন্ধ আস্বাদন করতে করতে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাই; হারিয়ে যাই ছেলেবেলার সেই শৈশব। যখন মনের আনন্দে পার্থিব দায়িত্বের বাইরে ছুটে বেড়াতাম পল্লী বাংলার এ পাড়া থেকে ও পাড়া; এ বাগান থেকে ও বাগানে। আহা! কী সব দিন ছিল, তখন যেন...."হারিয়ে যাবার নেই মানা"।
এ সকল ভালো লাগার অনুভূতির সঙ্গে মনপ্রাণজুড়ে ছিল রেডিও। কিন্তু হায়! নিজের কোনো রেডিও ছিল না। বাবার রেডিওটি লুকিয়ে চুরিয়ে মাঝে মাঝে শোনার সুযোগ ঘটতো বৈকি। রাত্রি বেলায় শোবার সময় বাবা রেডিওটি অন করে মাথার কাছে রেখে খবর বা অন্যান্য অনুষ্ঠান শুনতো, এর সাথে আমিও শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম।
এর পরে একটি ভাঙ্গা-চোরা রেডিও আমার হস্তগত হয়। পড়াশোনার ফাঁকে এই ভাঙ্গা যন্ত্র দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন কোনায় ঢুঁ মারতাম। এরকমই একদিন পেলাম রেডিও তেহরানকে। যদিও অনেক আগেই বাবার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের সাথে পরিচয় ঘটেছিল।
রেডিও তেহরানের ভালোবাসা আর ভালোলাগার সুগন্ধের আবেশ মাখানো প্রথম পত্রের পরশ পেয়েছিলাম ১৯৯২ সালের এক শীতকালে। আমাদের পরিচিত ডাকপিয়ন সুনীল দাস বাড়ির বারান্দায় রেখে গেল। ভেতর থেকে বার করলাম অমূল্য রতন! একটি ইকো অফ ইসলাম (সাদা কালো) পত্রিকার কপি, ব্রুসিয়ার, অনুষ্ঠানসূচি (রঙিন) আর ইমাম খোমেনী (রহ.) এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ছবি সম্বলিত সুদৃশ্য ক্যালেন্ডার (ইংরেজি ও ফার্সি)।
আহা! সেদিন, কী যে আনন্দ পেয়েছিলাম! ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সেই শুরু; এখনো অব্যাহত আমার সেই আরাধ্য বেতার ও তার সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধ। মাঝে ক্যারিয়ার, সংসার এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকায় একটু দূরে সরে গেলেও আবার আমাদের সম্পর্কগুলো নতুন করে গড়তে দিয়েছি।
সেই শৈশব-কৈশোরের দিন থেকে আজও রেডিও তেহরান বাংলা অনুষ্ঠানের মাঝে নিজেকে আলাদাভাবে খুঁজে পাই। মাঝে মাঝেই ঢুঁ মারি ‘পার্স টুডে’র ওয়েব পেইজে আর নিংড়ে নিই বর্তমানের রেডিও তেহরানকে।
বর্তমানের মাল্টিমিডিয়ার নানা মাধ্যমে রেডিও তেহরানকে খুঁজে নিই আর হারিয়ে যেতে চেষ্টা করি সেই শৈশব; আস্বাদনের চেষ্টা করি সেই ভালোলাগার মুহূর্তগুলো।
নিজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে রেডিও তেহরান ও তার বয়স বাড়াতে কার্পণ্য করেনি! প্রযুক্তির সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে এসেছে চল্লিশটা বছর; আর আমিও পার করে দিয়েছি চল্লিশটা বসন্ত! এ সম্পর্ক অটুট থাকার রসদ যুগিয়েছে রেডিও তেহরান আর ভবিষ্যতেও এ সম্পর্ক অটুট রবে- এ কামনা রইল নিরন্তর।
শুভেচ্ছান্তে
মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ
পশ্চিমবঙ্গ ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১