জুন ১৯, ২০২২ ১৬:৩৮ Asia/Dhaka
  • 'রেডিও তেহরানের প্রথম চিঠিটি আজও আমার কাছে সুখ স্মৃতি হয়ে আছে'

সর্বপ্রথমে রেডিও তেহরান বাংলা অনুষ্ঠানের ৪০তম বর্ষ পূর্তি উৎসবের ভাগি হতে পেরে ভীষণ গর্ববোধ করছি। সেই সাথে রেডিও তেহরান বাংলা অনুষ্ঠানের শতবর্ষ নয়, হাজার বর্ষ স্থায়িত্ব কামনা করছি।  

১৯৯০ সালের ০৫ এপ্রিল আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। নিয়মিতভাবে অনার্স ক্লাসের পাশাপাশি সাবসিডিয়ারী ক্লাসসমূহও চালিয়ে যাচ্ছি। এমনি এক সাবসিডিয়ারী ক্লাসে আমার সাথেই বেঞ্চে বসে ক্লাস করছে, বাংলায় অনার্স পড়া আব্দুস সালাম নামের এক বন্ধু। দেখি, উনি ক্লাস লেকচার নোট করছেন, "ফিবা রেডিও'র" রাইটিং প্যাডে।

এখানে বলা দরকার, ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই আমার প্রথম রেডিও জগত তথা ডিএক্সিং জগতের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। ঐ সময় একটি নতুন রেডিও স্টেশনের খোঁজ পেতে আমি ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। 

রেডিও প্রেমি তথা ডিএক্সার বন্ধুরা বুঝতেই পারছেন, আমার মত একজন নবীন রেডিও শ্রোতার কাছে এই মুহূর্তটা কেমন আকর্ষণীয় ছিল এবং ভিন্ন একটি রেডিও'র রাইটিং প্যাড আমার মনে কতটা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিল!

ক্লাসের ফাঁকেই আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে উনার সাথে পরিচিত হলাম। দেখলাম উনিও বেশ বন্ধুবৎসল। তিনি ফিবা রেডিও ছাড়াও আরো কয়েকটি ভিন্ন রেডিও স্টেশনের সময় সচি ও চিঠি লেখার ঠিকানা আমাকে জানালেন। 

এই দিনই আমি প্রথম উনার মাধ্যমে "রেডিও তেহরান" বাংলা অনুষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছিলাম। সময়টা ছিল ১৯৯০ সালের আগস্ট মাস। তখন থেকেই আমি রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান শোনা শুরু করি এবং ঐ আগস্ট মাসেই আমি সেখানে প্রথম চিঠি লিখেছিলাম। যার প্রতি উত্তরে রেডিও তেহরানের খামে আমার স্হায়ী ঠিকানায় প্রথম চিঠি এসেছিল ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর।

রেডিও তেহরান বাংলা অনুষ্ঠানের সন্ধান পাওয়ার ক্ষণটি এবং আমাকে দেয়া রেডিও তেহরানের নিজস্ব খামের চিঠিটি আজও আমার কাছে স্মরণীয় সুখ স্মৃতি হয়ে আছে। 

প্রথম চিঠির উত্তর পাওয়ার পর থেকে রেডিও তেহরান শোনা ও সেখানে চিঠি লেখা আমার নেশায় পরিণত হয়। আমার সেই নেশাকে আরো বেগবান করে আমার কাছে রেডিও তেহরান থেকে নিয়মিতভাবে ডাক যোগে পাঠানো অসংখ্য চিঠি এবং সে সব চিঠির ভেতরের বিভিন্ন ম্যাগাজিন, কিউএসএল কার্ড, অনুষ্ঠান সূচী, স্টিকার, বিভিন্ন মূল্যবান বই ইত্যাদি উপহারসামগ্রী। 

এমনি করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে রেডিও তেহরানের সাথে আমার যোগাযোগ চলতে থাকে। এর মাঝে ১৯৯৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার রেডিও তেহরান থেকে প্রথম আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য আমার বাড়ি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে দূর্গাপুর উপজেলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে ফোন করেন তৎকালীন উপস্থাপক মুজাহিদুল ইসলাম। রেডিও অনুষ্ঠান ছাড়াও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথন হয় প্রায় ২৪ মিনিট। তন্মধ্যে ৫ মিনিট প্রচার করে ১৯৯৮ সালের ০২ অক্টোবর চিঠিপত্রের আসর প্রিয়জনে। 

এরপর ১৯৯৯ সালের ১০ এপ্রিল শনিবার রেডিও তেহরান থেকে দ্বিতীয় বার একই টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে ফোন করে আবারও আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন মুজাহিদুল ইসলাম। এবারও রেডিও অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় প্রায় ১৪ মিনিট। যার প্রায় ০৭ মিনিট প্রচার করে ১৯৯৯ সালের ১৬ এপ্রিল শ্রোতাদের চিঠি পত্রের উত্তর দানের অনুষ্ঠান প্রিয়জনে। 

এর দীর্ঘ দিন পর, ১১ জুলাই ২০১৬ ইং রেডিও তেহরান থেকে আমার মোবাইল ফোনে ফোন করে আমার আর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মূসা রেজা। তাঁর সাথে আমার বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছিল ১০ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড। তবে সাক্ষাৎকারটি প্রিয়জনে প্রচার আমার শোনা হয়েছিল না। 

উল্লেখ্য, আমার প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরপরই রেডিও তেহরান থেকে আমাকে একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ 'পবিত্র কুরআন শরীফ' উপহার দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া আমার দেয়া প্রথম ও দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের যে অংশ স্টুডিওতে প্রচার হয়েছিল আমি সেগুলো রেকর্ড করে ছিলাম আমার ব্যবহার করা তৎকালীন টেপরেকোর্ডারে। যা আজও আমার সংগ্রহে রাখা, আমার ও রেডিও তেহরানের মধ্যে স্থাপিত "ডিএক্সিং সেতুবন্ধনের" অমূল্য স্মৃতি চিহ্ন। 

নিয়মিত চিঠিপত্র লেনদেন, ফোনালাপ ইত্যাদি ছাড়াও রেডিও তেহরানের প্রতি দিনের অনুষ্ঠান থেকে- বাংলা অর্থ সহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, মূল্যবান হাদিসের বর্ণনা, ইসলামের মহামানবদের জীবনী এবং ইরানের বিখ্যাত কবি সাধক ও জ্ঞানতাপসদের আলোচনা হতে আমি যে জ্ঞান আহরণ করেছি এবং করে চলেছি তা আমার জানার দিগন্তকে প্রসারিত করেছে অথৈই সমুদ্র সীমার ন্যায়, যা বিলীন হবে না কখনো। 

এখনো রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান শোনায় আমার ভাটা পড়েনি এতটুকুও। তার নির্ভীক সংবাদীয় উপজীব্য এবং সংবাদ বিশ্লেষণের আসর দৃষ্টিপাত শোনা আমার নিয়মিত কর্মের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, আমার কর্মব্যস্ততার দরুন আগের মত নিয়মিত চিঠি লেখা হয়ে উঠে না সত্য। কিন্তু রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগ তার অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিভিন্ন মাধ্যমের যে বৈচিত্রত্র্যতা এনেছে আশা করছি তা আমাকে আবার নিয়মিত চিঠি লেখায় উৎসাহিত করবে। 

 

মো: সাইফুল ইসলাম থান্দার

গ্রাম: পুরান তাহিরপুর, ডাকঘর: আলিয়াবাদ, থানা: দূর্গাপুর 

জেলা: রাজশাহী, বাংলাদেশ 

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ