জুন ২১, ২০২২ ১৮:১১ Asia/Dhaka
  • স্মৃতির পাতায় রেডিও তেহরান

সম্ভবত ৮০'র দশকের শেষের দিকের কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণ। কোটচাঁদপুর কামিল মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান মারফত রেডিও তেহরানের সন্ধান পাই। ওনার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে লিখে পাঠালাম চিঠি এবং প্রতি উত্তরের অপেক্ষার  প্রহর গুণতে লাগলাম। মাস দেড়েকে মধ্যে  অনুষ্ঠান সূচিসহ উপহার সামগ্রী পেলাম। অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম সেদিন। সেই শুরু।

নিয়মিত অনুষ্ঠান শুনে রিসিপশন রিপোর্টসহ পরামর্শ পাঠিয়ে নিয়মিত শ্রোতা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলাম। ১৯৯৪ সালে, 'কেন মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজন'-শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় ২য় স্থান অধিকার করলাম। কিছু দিন পরেই আবার মাসিক শ্রেষ্ঠ পত্রলেখক নির্বাচিত হলাম। নিজেকে যাচাই করার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগল। আসতে লাগল বিভিন্ন ধরনের ইসলামি বই, মাহজুবা, ইকো অফ ইসলাম, জমজম, পত্রিকাসহ কোরআন শরীফ ও অনেক উপহার সামগ্রী।

আমার ভেতরের ডিএক্সি-এর অংকুরিত বীজ ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে বিরাট মহীরুহে রূপান্তরিত হলো। এভাবে চললো অ-নে-ক অ-নে-ক দিন। ডি-এক্সিং-এর সোনালী দিনের একদিন বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠল। একে একে শর্টওয়েভের বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হতে লাগল। শ্রোতারা সব ছিটকে পড়ল এদিক ওদিক। আমিও ডিএক্সিং-এর মজা হারিয়ে ফেললাম। এর মধ্যে চাকরী জীবনে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই করোনার ভয়াল থাবা বাংলাদেশকে আক্রমণ করার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসল অভিশাপ রূপে। চারিদিকে শুধু আতঙ্ক আর হাহাকার। শুরু হলো লকডাউন। বাড়িতে অলস সময় কাটছিল। তৎক্ষণাৎ   মাথায় ডি-এক্সিং-এর ভুত আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।

কুড়িগ্রামের আবদুল কুদ্দুস ভাইয়ের কাছ থেকে সমুদয় তথ্য নিয়ে নতুন করে রেডিও তেহরানকে আবিষ্কার করার মানসে উঠে পড়ে লাগলাম। দেখলাম রেডিও তেহরান কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছে। অনুষ্ঠানসূচি  পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে বুঝলাম -পরিপূর্ণতায় ভরপুর তার অবয়ব। নতুন করে সংযোজিত হয়েছে পার্সটুডে, শর্টওয়েভ-এর সাথে ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ। মাসিক প্রতিযোগিতাও বাদ পড়িনি। শুরুতেই রেডিও তেহরান-এর ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব আয়োজিত উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ব্যর্থ হলাম। ১০ এর ভিতর থাকতে পারলাম না, থাকলাম ১৫-এর ভিতর। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে লাগলাম। মনে হতে লাগলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভাষা তৈরি করার মেশিনটা বোধ করি বা পুরোনো হয়ে গেছে। এ দ্বারা আর রচনার মতো সৃজনশীল জিনিস লেখা সম্ভব না। তাই লক্ষ্যকে ঘুরিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার দিকে স্থির করলাম। কয়েক মাসের ব্যবধানে কোন এক মাসে কইজ বিজয়ী তালিকায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত হলো। হঠাৎ করে একদিন সাক্ষাৎকার দেবার প্রস্তাব পেলাম। সাদরে তা গ্রহণও করলাম। রেডিওতে সেটা প্রচারিত হলো। দ্বিগুণ উৎসাহে টগবগে মন নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক লেখা পাঠাতে লাগলাম। সবগুলো ইমেইলই পার্সটুডেতে প্রকাশিত হলো এমনকি প্রিয়জন আসরেও তার অন্যথা হলো না।

নতুন করে রেডিও তেহরান-এর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমি অনেক পুরনো বন্ধুকে নতুন করে ফিরে পেলাম। পেলাম নতুন নতুন অনেক জুনিয়র বন্ধু। প্রতিদিন অনুষ্ঠান না শুনলে মোটেই ভালো লাগে না কেন- এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম। বুঝলাম প্রিয়জন, রংধনু, পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা, ইরান ভ্রমণ, সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও তার বিশ্লেষণ আমার অস্তিত্বকে রেডিও তেহরান-এর দিকে ধাবিত করছে। তাই তো প্রতিদিনের অনুষ্ঠান শেয়ার করি গ্রুপে কিংবা ব্যক্তিগত বন্ধুদের কাছে। সব বেতার যখন রেডিও প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে তখন রেডিও তেহরান তার সংগ্রামী কণ্ঠস্বর দিয়ে সগৌরবে বাঙালি শ্রোতাদের কাছে বেচে আছে মাথা উঁচু করে। মজলুমের হাহাকার ও আর্তনাদ তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে আকাশ বাতাস ও অন্তরীক্ষে পৌঁছে যাক।

কামনা করি রেডিও তেহরান যেভাবে শ্রোতাদের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত তা অক্ষুণ্ন থাক।

 

নজরুল ইসলাম

সভাপতি, বন্ধন অ্যান্ড লাকী শ্রোতা সংঘ

মহেশপুর-৭৩৪০, ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ  

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ