'সত্য সাধকের ভূমিকায় পেয়েছি নন্দিত গণমাধ্যম রেডিও তেহরানকে'
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i129278-'সত্য_সাধকের_ভূমিকায়_পেয়েছি_নন্দিত_গণমাধ্যম_রেডিও_তেহরানকে'
জনাব, আসসালামু আলাইকুম। শুরুতেই জানাই হিমের পরশ মাখা শিশির সিক্ত, সুরভিত শিউলি ঝরা রৌদ্রঝলমল সকালের একরাশ শুভেচ্ছা। 
(last modified 2025-09-26T18:07:30+00:00 )
অক্টোবর ১২, ২০২৩ ১২:৫৬ Asia/Dhaka
  • 'সত্য সাধকের ভূমিকায় পেয়েছি নন্দিত গণমাধ্যম রেডিও তেহরানকে'

জনাব, আসসালামু আলাইকুম। শুরুতেই জানাই হিমের পরশ মাখা শিশির সিক্ত, সুরভিত শিউলি ঝরা রৌদ্রঝলমল সকালের একরাশ শুভেচ্ছা। 

সত্যকে আজ হত্যা করে অত্যাচারীর খাড়ায়
নেই কিরে কেউ সত্য-সাধক বুক খুলে আজ দাঁড়ায়।

হ্যাঁ, সত্য সাধকের ভূমিকায় আজ আমি পেয়েছি এক সর্বজন নন্দিত গণমাধ্যম রেডিও তেহরানকে। যে সত্যকে হাতিয়ার করে নির্ভীক চিত্তে বিশ্ব সংবাদের মাধ্যমে  প্রতিনিয়ত লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ বর্ণনা।

আর রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানের আমি একজন নিয়মিত শ্রোতা হিসাবে সেই তথ্য জানতে পারছি ঘরে বসেই। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর "দেখবো এবার জগৎটাকে" কবিতায় বলেছেন. "বিশ্বটাকে দেখবো এবার আপন হাতের মুঠোয় পুরে।"

তাঁর সেই অমর বাণীর বাস্তব রূপ আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি হাতের মুঠোয় একটা ক্লিকের মাধ্যমে। এখনো পর্যন্ত পক্ষপাতিত্বের কালিমা স্পর্শ করতে পারেনি রেডিও তেহরানকে। যদিও আজ বিশ্বের অধিকাংশ বেতার পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঠিক বিশ্লেষণও জানতে পারছি সংবাদ ভাষ্যের অনুষ্ঠান দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে। 

রেডিও তেহরানের আরও এক মূল্যবান অনুষ্ঠান হচ্ছে সুন্দর জীবন। মানব জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে যথেষ্ট সাহায্য করবে এই অনুষ্ঠান। গত ১/৯/২৩ ও ৮/৯/২৩ তারিখের অনুষ্ঠানে সৃজনশীলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ থেকে জানলাম শিক্ষাগ্রহণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে সৃজনশীলতাকে উন্নত করা যায়। সৃজনশীলতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে, জীবনকে একঘেয়েমী থেকে উত্তরণে নিয়ে যেতে সাহায্য করে, মানুষকে এনে দেয় নতুনত্ব।

তারুণ্যের নানান বিষয়কে কাজে লাগানোর কৌশল বিষয়ক রেডিও তেহরানের আরও একটি মূল্যবান অনুষ্ঠান সোনালী সময়। যা থেকে তরুণ প্রজন্ম তাদের আদর্শকে, তাদের স্টাইলকে সঠিকভাবে নির্বাচন করার উপায় জানতে পারে। জানতে পারে পাশ্চাত্যের অশালীন পোশাক ব্যবহারের ও তাদের মতো অসামাজিক মেলামেশার কুফল সম্বন্ধে। 

সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। 

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণ কর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

বিদ্রোহী কবি তার নারী কবিতায় এভাবেই নারীর সমানাধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। রেডিও তেহরানও তার সমাজ ও সভ্যতা নির্মাণে নারীর আদর্শ ভূমিকা বিষয়ক "নারী: মানব ফুল" নামক মুল্যবান অনুষ্ঠানেও নারীর সম্মান, অধিকার, আদর্শ সমাজ গড়ার কাজে নারীর অবদান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যে অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে তা সর্বজনীন প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানটি নিয়মিত শুনতে থাকলে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সভ্যতা ও আধুনিকতার নামে নারী সমাজকে, বিশেষভাবে মুসলিম নারী সমাজকে যেভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তা থেকে খুব সহজেই নিজেকে বাঁচাতে পারবে।

দর্পন, রেডিও তেহরানের আরও এক মূল্যবান অনুষ্ঠান। আমরা আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন নিজের চেহারাকে খুব সুন্দরভাবে দেখতে পাই, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকাসহ সুন্দর মুখোশধারী পাশ্চাত্যের দেশগুলোর আসল চেহারা এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। এরা সভ্যতা, নারী স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক বড়ো বড়ো কথা বলে থাকে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে, ১৯৬৮ সালের ভিয়েতনামের যুদ্ধে, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে এরা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তা কারোরই অজানা নয়। নব প্রজন্মের সামনে দর্পন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রেডিও তেহরান তাদের এই মুখোশ উন্মোচন করে দেয় তাদের আসল চেহারা দেখার জন্য। এর জন্য  রেডিও তেহরানকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারি না। 

রেডিও তেহরান কম বয়সী শ্রোতাদের জন্য রংধনু আসর ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান গল্প ও প্রবাদের গল্প অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। অথচ দুটি অনুষ্ঠানেই শুধু শিশু-কিশোর নয় বড়োদের ও অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। কারণ একটাই। এই অনুষ্ঠান দুটিতে গল্পের মধ্যে যে শিক্ষণীয় বিষয় আছে তা সকল স্তরের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য। আমরা যদি তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি তাহলে অবশ্যই অনেক সুফল পেতে থাকবো তাতে কোনো সন্দেহ নাই। উদাহরণস্বরুপ- গত দুটি পর্বে কবুতর দম্পতি, তুলো চোর ও ইবরাহীম আদহামের গল্পের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইরান একটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ। সে দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প ও স্থাপত্য কলা সম্বন্ধে অনেকেরই অজানা। রেডিও তেহরান শ্রোতাদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ইরান ভ্রমণ, বিভিন্ন মনীষীর জীবনী প্রচার করে শ্রোতাদের জ্ঞান পিপাসা মিটাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস থেকে কিভাবে হুসাইনি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, আধ্যাত্মিক জ্ঞানে বলীয়ান হয়ে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে বাথপন্থী সাদ্দাম হোসেন ও তার দোসরদের পরাজিত করে বিজয় লাভ করেছে।

শুধু তাই নয়। রেডিও তেহরান শ্রোতাদের মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যার প্রতিফলন দেখা যায় প্রিয়জন অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা জানতে পারি শ্রোতাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগার কথা, তাদের চাহিদার কথা। রেডিও তেহরান  অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সেগুলো বিচার বিবেচনা করে থাকে। একই সাথে শ্রোতাদের সাথে টেলিফোন আলাপচারিতার মাধ্যমে শ্রোতামহলে তার পরিচয় তুলে ধরে যা খুব কম বেতার কেন্দ্রে দেখা যায়। ইরানের উপর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার অন্যায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রেডিও তেহরান তার সীমিত ক্ষমতার মধ্য দিয়ে শ্রোতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পুরস্কার মূলক প্রতিযোগিতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। যা বর্তমান বিশ্বের বেতার কেন্দ্রে এক বিরল দৃষ্টান্ত। এ থেকে শ্রোতারা যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি রেডিও তেহরানের শ্রোতা সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অনুষ্টান শুনলেই লক্ষ্য করা যায়।

স্বাস্থ্যকথা রেডিও তেহরানের এক মূল্যবান অনুষ্ঠান। ঘরে বসে থেকেই আপনাদের অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও সুস্থ থাকার উপায় পেয়ে থাকি বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার থেকে। ফলে অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

কিন্তু রেডিও তেহরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অনুষ্ঠান তা হলো পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত ও তর্জমা। সেই সাথে কুরআনের আলো অনুষ্ঠান। যা আমাদের, বিশেষ করে বিশ্ব মানব সমাজের দিক নির্দেশনা। অনুষ্ঠানটি নিয়মিত শুনে যদি তার নির্দেশাবলি আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে  আমাদের জীবন হয়ে উঠবে সুখময়। বিশ্বে সৃষ্টি হবে এক শান্তির বাতাবরণ। পৃথিবী হবে হিংসা, বিদ্বেষ ও সন্ত্রাস মুক্ত অনাবিল শান্তির এক আবাসস্থল। 

এতো সব থাকার পর যদি তা শ্রোতাদের শ্রবণ যোগ্য না হয়, শ্রোতারা যদি রিসেপশন মান খারাপের জন্য অনুষ্ঠান শুনতে না পারেন তাহলে তা হবে ছাদবিহীন বাড়ির ন্যায়। তাই আমি অনুরোধ করছি রেডিও তেহরানের কর্মকর্তা ও কলাকুশলীদের, অপনারা  অনুষ্ঠানের রিসেপশন মান ও সাউণ্ড কোয়ালিটি যাতে ভালো থাকে সে বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান হবেন। 

পরিশেষে আমি রেডিও তেহরানের সকল শ্রোতাদের জন্য এই বার্তা দিতে চাই আপনারা নিয়মিত রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান শুনুন, আপনাদের পরিবারের সকল  সদস্যদের রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে সাহায্য করুন এবং  আপনার প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে অনুপ্রাণিত করুন। সেই সাথে আপনাদের গঠনমূলক মতামত রেডিও তেহরানের প্রিয়জন অনুষ্ঠানে পাঠাতে থাকুন। আর আমরা যদি এ কাজ টুকু করতে পারি  তাহলে তা হবে রেডিও তেহরান তথা আমাদের এই ডিএক্সিং জীবনের যথার্থ সার্থকতা। 

 

শুভেচ্ছান্তে, 

নিজামুদ্দিন শেখ
সভাপতি, ফেমিলি রেডিও লিসনার্স ক্লাব 
গ্রাম: নওপাড়া, পোস্ট: নওপাড়া শিমুলিয়া 
জেলা: মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত। 
 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২