যেসব কারণে শৈশব থেকে রেডিও তেহরানের সঙ্গী হয়ে আছি…
"পারস্য উপসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর, রেডিও তেহরান সঙ্গী হোক আপনার আমার"... সেই শৈশব থেকে আজ অবধি রেডিও তেহরান সঙ্গী হয়ে আছি আপনজনের মতো।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র.)-এর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা আমাকে মুগ্ধ-আকৃষ্ট করে; এরই ফলশ্রুতিতে রেডিও তেহরানের গুণমুগ্ধ শ্রোতায় পরিণত হই। রেডিও তেহরান একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিসেবে যে সকল ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আমার নজর কেড়েছে, তার কয়েকটা বিষয় নিম্নে আলোকপাত করলাম:
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা ও বিশ্লেষণ:
"খবরের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা" -রেডিও তেহরানের এই ট্যাগ লাইনের সাথে সাযুজ্য রেখে প্রতিনিয়ত বস্তুনিষ্ঠ ও তাজা সংবাদের পাশাপাশি সারা বিশ্বে চলমান ঘটনাবলী নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও খবরের ভেতরের খবরকে আমাদের সামনে তুলে ধরে রেডিও তেহরান। বর্তমান একপেশে নীতি ও সংবাদ মাধ্যমগুলোর কোন একটা পক্ষ অবলম্বন করার বিপরীত ঝোঁকে অবস্থান গ্রহণ করে চলেছে এ বেতার।
ইরানের বিশ্বকোষ:
ইরানের শিল্প সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, পর্যটন, বিনোদন, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, প্রভৃতি নানা বিষয় জানার একমাত্র মাধ্যম হলো রেডিও তেহরান। নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সকল বিষয় সম্বন্ধে জানা, বোঝা সম্ভব। একটা বিদেশি বেতার কেন্দ্র হিসেবে সেই দেশের নানান বিষয় শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরার যে প্রয়াস তা সার্থক করেছে।
ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের বিকাশ:
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুরআন তেলাওয়াত ও তার ভাবার্থ প্রকাশের পাশাপাশি, ‘আসমাউল হুসনা’, ‘কুরআনের আলো’, ‘আদর্শ মানুষ গড়ার কৌশল’, ‘গল্প ও প্রবাদের গল্প’এবং পূর্বের ‘আদর্শ পরিবার’ প্রভৃতি অনুষ্ঠান ছাড়াও বিশেষ অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবন শৈলী ও জীবনচর্যার পথ নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
ইসলামী বিপ্লবের দর্শন পৌঁছে দেবার মাধ্যম:
১৯৭৯ সালে ইরানের ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সেখানে প্রথমবারের মতো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন ইমাম খোমেনী (রহ.)। কিন্তু কোন জাদুবলে এটা সম্ভব হলো? ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বের ধরণ প্রসঙ্গে মার্কিন অধ্যাপক হামিদ আলগার বলেছেন,-
".... তিনি যে বিপ্লব করেছেন তা শুধু রাজনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাপার ছিল না, আধ্যাত্মবাদের এক অন্তর্নিহিত শক্তির মাধ্যমেও তা নিখুঁত-নির্ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে।"
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের দর্শনকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেবার গুরু দায়িত্ব পালন করে চলেছে এ বেতার। ইমামের প্রত্যেকটা বাণী ও চিরায়ত স্বরূপ উন্মোচন করে দিতে বদ্ধপরিকর রেডিও তেহরান।
মজলুম মানুষের কণ্ঠস্বর; সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার মাধ্যম:
মরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) যেকোনো জালেম শক্তির বিরুদ্ধে মজলুম জাতির লড়াই বা আন্দোলনকে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দেন। ইমাম বলেছিলেন "যতদিন পর্যন্ত না 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'- এ বাণী সমগ্র পৃথিবীতে ধ্বনিত হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে, পৃথিবীর যেখানেই জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম সেখানেই আমরা আছি।"
মজলুম মুসলমানদের কণ্ঠস্বর ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার মাধ্যম হিসেবে আমার প্রিয় বেতার কেন্দ্র রেডিও তেহরান। দিনের পর দিন প্যালেস্টাইনের মজলুম মুসলিম জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে বিরাজ করছে রেডিও তেহরান।
শ্রোতার মতামতকে তুলে ধরার মাধ্যম:
শ্রোতাদের মতামত ও মূল্যায়নকে যথাযথ মর্যাদা দেয় রেডিও তেহরান। একটা গণমাধ্যমের মূল প্রাণশক্তি তার শ্রোতা। শ্রোতাদের মতামতকে তুলে ধরার এক অমূল্য প্লাটফর্ম ‘প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান। সেই শৈশব থেকে আজও রেডিও তেহরানের সাথেই রয়েছি। আজ রেডিও তেহরান ৩৯ বছরের পরিণত একটি গণমাধ্যম; আর আমিও একজন পরিণত শুভাকাঙ্ক্ষী। এখনও ফেইসবুক ও ওয়েব পেইজে ঢুঁ মারি নিয়মিত; আঙুলের স্পর্শে নিংড়ে নিই বর্তমানের ‘পার্সটুডে’কে। আরো ১০০ বছর এভাবেই নীরব-স্পর্শে, শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকতে চাই রেডিও তেহরানের সঙ্গে।
লেখক: এস এম নাজিমউদ্দিন, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।