আগস্ট ৩১, ২০২৩ ১৭:৫৫ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধযজ্ঞ বন্ধে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহ্বান

ইহুদিবাদী ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে তার অপরাধযজ্ঞের মাত্রা আরও তীব্রতর করেছে এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ অব্যাহত রেখেছে।

আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে,  চলতি বছর এবং গত বছরটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর ছিল। এই মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরের মধ্যে গত বছরটি ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর ছিল এবং চলতি বছরও একই গতিতে ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ২২ আগস্ট আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।

এই প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসরাইলি সৈন্যরা কোনো সতর্কতা ছাড়াই ফিলিস্তিনি শিশুদের শরীরের উপরের অংশে গুলি করেছে এবং এ ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা বিচার করা হয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অধিকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনি শিশুদের শহীদের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীকে যদি কঠোর চাপের মধ্যে না ফেলা হয় তবে আমরা আরও অধিক ফিলিস্তিনি শিশু হত্যার সাক্ষী হব।

তার প্রতিবেদনে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নভেম্বর ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত চারটি গুলিবর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তার তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এই সময়ে চার ফিলিস্তিনি শিশু শহীদ হয়েছে। এই সংস্থার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৭ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর মাহমুদ আল-সাদি ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর জেনিন শরণার্থী শিবিরের কাছে স্কুলে যাওয়ার সময় শহীদ হন। এ সময় হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না এবং  ১০০ মিটার দূর থেকে  ইসরাইলি সেন্যরা তাকে লক্ষ্য করে তাজা গুলি চালায়।  

১৭ বছর বয়সী, আরেকজন ফিলিস্তিনি কিশোর মুহাম্মদ আল-সালিম পশ্চিম তীরের উত্তরে অবস্থিত "আজুন" গ্রামে ইহুদিবাদী সেনাদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় শহীদ হয়েছিল তার সঙ্গে আরও তিন শিশুও দখলদার ইসরাইলি সেনার গুলিতে আহত হয়। 

ওয়াদি আবু রামুজ হলেন দ্বিতীয় ১৭ বছর বয়সী কিশোর যিনি ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি ইহুদিবাদী এক স্নাইপার দ্বারা নিহত হন। এমন কি কয়েক মাস ধরে এই কিশোরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এবং ইহুদিবাদী শাসকরা এরপর তার পরিবারকে রাতে তাকে দাফন করার নির্দেশ দেয়। অ্যাডাম আইয়াদ হল আরেক ১৫ বছর বয়সী কিশোর যাকে আল-দাশেহ ক্যাম্পে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারিতে ইহুদিবাদী সৈন্যরা তার পিঠে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ১৩ বছরের এক শিশুও জায়নবাদী স্নাইপারের গুলিতে আহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সব ক্ষেত্রেই, ইসরায়েলি সৈন্যরা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এবং টিয়ার গ্যাসের মতো অ-মারাত্মক সরঞ্জাম ব্যবহার না করেই শরীরের উপরের অংশে গুলি চালায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ  জাতিসংঘের সমালোচনা করে জোর দিয়েছিল যে এই সংস্থার উচিত ইসরায়েলি সরকারকে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ মহাসচিবকে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছিল।

যদিও জাতিসংঘের মহাসচিব ৮,৭০০ শিশু হত্যায় ইসরাইলি ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন তবুও তিনি এ পর্যন্ত শিশু অধিকার লঙ্ঘনকারীদের তালিকায় এই সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছেন। হিব্রু ভাষার সংবাদপত্র হারেৎজও একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি সৈন্যদেও ওপর পাথর নিক্ষেপ করলে বা তাদের ওপর ককটেল ছুড়লে  ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই পত্রিকাটি স্বীকার করেছেন যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এমন পরিস্থিতিতে  ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে শক্তি প্রয়োগ করেছে তা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ